প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফের ফাঁসির আদেশ দিল পাকিস্তানের বিশেষ আদালত। —ফাইল চিত্র
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফকে। ২০০৭ সালে সংবিধান বাতিল করে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন তিনি, যা বিশেষ আদালতের মতে রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। দেশের ইতিহাসে এই
প্রথম কোনও সামরিক শাসক এমন শাস্তি পেলেন। পেশোয়ার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ওয়াকার আহমেদ শেঠের নেতৃত্বাধীন বিশেষ আদালতের তিন সদস্যের বেঞ্চ জানিয়েছে, ৭৬ বছর বয়সি প্রাক্তন সেনাপ্রধান রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফকে সরিয়ে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসেন মুশারফ। ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের পদে ছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে চিকিৎসার জন্য তাঁকে দুবাইয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এ মাসের গোড়ায় দুবাইয়ের হাসপাতাল থেকে একটি ভিডিয়ো বিবৃতিতে মুশারফ জানিয়েছিলেন,
তাঁর বিরুদ্ধে মামলা একেবারেই ভিত্তিহীন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি দেশের জন্য ১০ বছর কাজ করেছি। দেশের জন্য লড়াই করেছি। এই রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা ভিত্তিহীন।
আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ গত তিন বছর ধরে দুবাইয়ে তাঁর বাস। তবে চিকিৎসার জন্য এখন তিনি লন্ডনে আছেন বলে দাবি।
নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে মুশারফের আইনি পরামর্শদাতারা আবেদন জানাতে পারেন সুপ্রিম কোর্টে। তবে সুপ্রিম কোর্ট যদি বিশেষ আদালতের রায় বহাল রাখে, সে ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমাভিক্ষার আর্জি জানাতে পারেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট।
২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে সংবিধান বাতিল করে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন মুশারফ। তাঁর এই পদক্ষেপ থেকে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল। ইমপিচমেন্টের আশঙ্কা থেকে বাঁচতে পরের বছরেই ইস্তফা দিতে বাধ্য হন এই সামরিক শাসক। ২০১৩ সালে শরিফ ক্ষমতায় ফিরলে মুশারফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা শুরু করেন। পরের বছর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে প্রাক্তন সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। যদিও মুশারফের যুক্তি ছিল, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আর ২০০৭ সালে তিনি যে পদক্ষেপ করেছিলেন, তাতে সে সময়ের সরকার ও মন্ত্রিসভার সায় ছিল। কিন্তু মুশারফের যুক্তি কোর্টে পাত্তা পায়নি। তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি পদক্ষেপ করারই অভিযোগ ওঠে। তার পাঁচ বছর পরে রায় দিল বিশেষ আদালত।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। ২০১৬ সালে দুবাইয়ে যাওয়ার অনুমতি পাওয়ার পরে সেখানে চিকিৎসা চলছে মুশারফের। তার পর থেকে বিশেষ আদালত বার বার তাঁকে হাজিরা দিতে নির্দেশ দিলেও তা এড়িয়ে গিয়েছেন প্রাক্তন শাসক।
একটি দুর্নীতি মামলায় তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল পাকিস্তানের আর একটি আদালত। সে মামলায় শারীরিক অসুস্থতার কারণে জামিন পেয়েছেন তিনি। তিন বছর আগে মার্চে দুবাইয়ে চিকিৎসার জন্য গিয়ে তিনি আর ফেরেননি। তার কয়েক মাস পরে বিশেষ আদালত তাঁকে ধারাবাহিক অপরাধী ঘোষণা করে। বারবার আদালতে হাজির না হওয়ার জন্য পাকিস্তানে মুশারফের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয় আদালত। একই ভাবে আদালতের নির্দেশে বাতিল হয় তাঁর পাসপোর্ট ও সব পরিচয়পত্রও।