ইমরান এবং হাফিজ। ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে ইমরান খান বসার পরেই তৎপরতা বেড়েছিল লস্কর-ই-তৈবার। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১-এর ৩১ অগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা করার পরে প্রকাশ্যে পাক-আফগান সীমান্তে তালিবান বাহিনীর সঙ্গে তৎপরতা শুরু করেছিল হাফিজ মহম্মদ সঈদ অনুগত জিহাদিরা। তালিব বাহিনীর কাবুল দখলের পর লস্কর বাহিনী ফের নজর ঘোরায় কাশ্মীরে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন নয়া পাক সরকারের একটি সূত্রের দাবি, ইমরানের চার বছরের শাসনে লস্করের শিকড় অনেকটাই মজবুত হয়েছে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের পাশাপাশি ইমরানের দলের শক্ত ঘাঁটি খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশেও সংগঠনের ভিত মজবুত করেন রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘সন্ত্রাসবাদী’ তালিকায় থাকা হাফিজ। লস্করের সামাজিক সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়ার হয়ে খোলাখুলি জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাস চালানোর জন্য বিপুল অর্থও সংগ্রহ করেন।
ইমরান জমানায় ২০২০ সালে হাফিজকে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া সংক্রান্ত একটি আর্থিক মামলায় সন্ত্রাসদমন আদালত ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়। অভিযোগ, তাঁর সেই বন্দিদশা ছিল নেহাতই কাগজে-কলমে। গৃহবন্দি থাকা অবস্থাতেও ২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসের মূল চক্রী বছরের পর বছর অবাধে পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। ভারতের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তৃতা করেছেন। হাফিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই গত বছর পাকিস্তানকে ‘ধূসর তালিকা’তেই রেখে দেয় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে আর্থিক মদতের উপর নজরদারি চালানো আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স’ (এফএটিএফ)।
ঘটনাচক্রে, চলতি মাসের গোড়ায় ইমরান সরকারের পতনের সম্ভবনা স্পষ্ট হওয়ার পরে ফের হাফিজের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় সক্রিয়তা শুরু হয়। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী আদালত দু’টি মামলায় তাঁকে ৩১ বছরের জেলের সাজা দেয়। হাফিজের যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দিয় আদালত।
একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, হাফিজের অনুপস্থিতিতে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসের দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর ছেলে তলহা। আফগান তালিবানের হক্কানি গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ হাফিজ-পুত্র আফগানিস্তানের ভারতীয় ঠিকানাগুলিতে হামলা চালানোর জন্য পাক-আফগান সীমান্তে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলেছিলেন বলেও অভিযোগ নয়াদিল্লির। হক্কানি নেটওয়ার্কের পাশাপাশি তলহা-সহ লস্কর নেতাদের সঙ্গে কাশ্মীরের প্রয়াত বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির নাতি মুজাহিদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী নেত্রী আশিয়া আন্দ্রাবিরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।