ফাইল চিত্র।
প্রায় হঠাৎই দু’দিনের ঝটিকা সফরে বাংলাদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন ভারতের বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার রিভা গঙ্গোপাধ্যায় দাশ জানান, দু’দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দিল্লির ‘বিশেষ বার্তা’ নিয়ে এসেছেন বিদেশসচিব।
ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ‘গণভবনে’ হাসিনার সঙ্গে শ্রিংলার বৈঠক শুরু হয় আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। চলে প্রায় এক ঘণ্টা। পরে সাংবাদিকদের রিভা বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রয়েছে বিশেষ ও নিবিড় সম্পর্ক। এই কারণে মহামারির মধ্যে আন-অফিশিয়াল সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন বিদেশসচিব।” তিনি আরও জানান, শ্রিংলার সফরকে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সাধুবাদ জানিয়েছেন। করোনা-পরবর্তী সময়ে দু’দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা জোরদার করা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
ভারতে লকডাউন শুরু হওয়া ইস্তক এটিই শ্রিংলার প্রথম বিদেশ সফর। কাল দুপুরে বাংলাদেশের বিদেশসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে শ্রিংলা বৈঠক করবেন। বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ হওয়ার কথা।
আজ সকাল সাড়ে ১১টায় বায়ুসেনার বিমানে ঢাকায় পৌঁছন শ্রিংলা। দু’দেশের তরফেই তাঁর এই সফর নিয়ে বেশি প্রচার দেখা যায়নি। তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞেরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, শ্রিংলা ভারতীয় হাই কমিশনার হিসেবে দীর্ঘদিন ঢাকায় ছিলেন। করোনার আবহে একাধিক দ্বিপাক্ষিক সফর বাতিল হওয়া সত্ত্বেও তিনি আজ ঢাকায় গিয়েছেন। তাঁর সফরের খবর গত রাতে নিশ্চিত ভাবে জানায় বাংলাদেশ সরকার। কাজেই এই সফরের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মোদীর জমানায় বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ভারতের। গত বছরে নাগরিকত্ব আইন বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকে কেন্দ্র করে বিজেপি নেতাদের মন্তব্য ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছিল। এখন লাদাখে চিন-ভারত স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। আর পুরনো সুসম্পর্কের জেরে বাংলাদেশের উপরে ক্রমাগত প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে চিন। ভারত-বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তি আটকে রয়েছে। কিন্তু শুষ্ক মরসুমে তিস্তার জলস্তর ধরে রাখার প্রকল্পে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে চিন। করোনার সম্ভাব্য টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা বাংলাদেশে চালানোর ছাড়পত্রও চিন পেয়েছে। এ দিকে, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সম্প্রতি হাসিনাকে ফোন করে করোনা ও বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, ঢাকার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় ইসলামাবাদ।
রামমন্দিরের শিলান্যাস ঘিরেও ঘরোয়া ভাবে কট্টরপন্থীদের সামনে হাসিনার সরকার অস্বস্তিতে পড়ছে বলে অনেকের মত। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী মোমেন সম্প্রতি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে সম্পর্ক, তা ঐতিহাসিক। এটাকে (মন্দির নির্মাণ) সেই সম্পর্কে আঘাত হানতে দেব না। তা-ও ভারতের কাছে অনুরোধ, এমন কিছু ঘটতে দেওয়া যাবে না, যা দু’দেশের সুন্দর ও গভীর সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারে।’’ সম্প্রতি বাংলাদেশকে ১০টি রেল ইঞ্জিন দিয়েছে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ইঞ্জিনগুলি পুরনো। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছিলেন, ‘‘এমন ক্ষতিকর কাহিনিগুলো একই জায়গা থেকে উঠে আসছে।’’
এই আবহেই শ্রিংলার সফর। বাংলাদেশের বিদেশসচিব জানান, করোনা পরিস্থিতি ও অক্সফোর্ডের টিকা পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও শ্রিংলার সঙ্গে তিনি কথা বলবেন।