—ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ দু’বছরেরও বেশি সময় পার করে ভারতে নামল চিনের কোনও শীর্ষ স্তরের নেতার বিমান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি পৌঁছলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। কোনও বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সফরকে ঘিরে এত বিতর্ক সাম্প্রতিক অতীতে বিরল।
চিনা বিদেশমন্ত্রী তাঁর ভারত সফরের প্রাক্কালেই পাকিস্তানে ওআইসি (অর্গানাইজ়েশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন) সম্মেলনে যোগ দিয়ে কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। ওই মন্তব্যকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে গত কাল রাতে উল্লেখ করে দিল্লি। সেই বিতর্কের রেশ আজও মিলিয়ে যায়নি। কারণ ওআইসি-তে গৃহীত প্রস্তাবের আজ সরাসরি নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছে ভারত।
ওআইসি সম্মেলনে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে চিনা বিদেশমন্ত্রী বলেছিলেন, “জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে আজও আমাদের অনেক ইসলামিক বন্ধুর বক্তব্য শুনলাম। ভারতের কাছে তাদের মতোই একই পদক্ষেপ আশা করছে চিন।’’ অর্থাৎ ইসলামি গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীরা যে মত প্রকাশ করেছিলেন, তাতে ওয়াং সমর্থন জুগিয়েছেন বলে বক্তব্য কূটনৈতিক মহলের। এর পরই কড়া প্রতিক্রিয়া দেয় ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, “চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াংয়ের বক্তব্য আমরা খারিজ করে দিচ্ছি। জম্মু-কাশ্মীরের যে কোনও বিষয়ই সম্পূর্ণ ভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত। এবং তা অভ্যন্তরীণ। তা নিয়ে শুধু চিন নয়, কোনও দেশকেই মতামত দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়নি। ভারত যেমন কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করে না, তেমনই অন্যান্য দেশেরও তা না করাই বিধেয়।”
আজ অরিন্দম নির্দিষ্ট ভাবে ওআইসি-তে গৃহীত প্রস্তাবে ভারত-বিরোধী সুরের নিন্দা করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘পাকিস্তানের মতো ধারাবাহিক ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশের উস্কানিতে ভারতে সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে মন্তব্য করাটা খুবই উদ্ভট। মিথ্যা এবং ভুল ব্যাখ্যার উপরে দাঁড়িয়ে ভারত সম্পর্কে মন্তব্য করা হচ্ছে। এতে ওআইসি-র মতো সংগঠন এবং পাকিস্তানের মতো উস্কানিদাতাদের অপ্রাসঙ্গিকতাই প্রমাণ হয়।’’
তবে কাশ্মীর নিয়ে চিনের এ হেন মন্তব্য অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর আগেও একাধিক বার এই ধরনের মন্তব্য করেছে বেজিং। যা নিয়ে ভারতের তরফে বারবার কড়া বার্তাও দেওয়া হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে উত্তপ্ত ভূকৌশলগত পরিস্থিতিতে চিনের কাশ্মীর সংক্রান্ত মন্তব্য আলাদা করে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার ভারত-চিন মুখোমুখি বৈঠকে কী হয় সে দিকেও নজর রাখছে আন্তর্জাতিক মহল।
আজ অবশ্য পাকিস্তান নয়, কাবুল থেকে ভারতে এসেছেন ওয়াং ই। পাকিস্তান থেকে সরাসরি ভারতে আসার ব্যাপারে দিল্লি আপত্তি জানায় বলে সূত্রের খবর। সূত্রের বক্তব্য, ভারত এবং পাকিস্তানকে একই বন্ধনীতে রেখে কোনও সফর যে চিনের কাছে ভারত প্রত্যাশা করে না, তা কূটনৈতিক চ্যানেলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জানা গিয়েছে, ভারতে আসার আগে চিনা বিদেশমন্ত্রীর কাবুল ঘুরে আসার কারণ এটাই।