প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
ভোটবাক্সে হিন্দুত্বের ঝড় তুলতে না পারলেও তিনিই যে তৃতীয় বারের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন, সে বিষয়ে সংশয়ের খুব একটা অবকাশ নেই। ভোটগণনার পরে এই ছবি স্পষ্ট হতেই সমাজমাধ্যম এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) মোদীকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠাতে শুরু করলেন বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতা।
কিন্তু মোদীর এই ‘শরিক-নির্ভর’ জয় নিয়ে তির্যক মন্তব্য করতে ছাড়েনি বিভিন্ন বিদেশি সংবাদমাধ্যম। আমেরিকার একটি টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনে ভারতে বুথফেরত সমীক্ষারও সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ‘বিরোধীপক্ষের মৃত্যুসংবাদ ছাপা হয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, যেন এই ভোটের ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত। মনে হচ্ছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদই এ বারের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হবে। কিন্তু ২০১৬-য় ট্রাম্পের জয় বা ব্রেক্সিটের মতো এ ক্ষেত্রেও ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণিত হল। ক্ষমতায় আসার এক বছর পরে জোটসঙ্গীদের সাহায্যে এ বার সরকার গড়তে হবে নরেন্দ্র মোদীকে। এবং ভবিষ্যতে অনেক সতর্ক ভাবে পা ফেলতে হবে।’
আমেরিকার একটি প্রথম সারির সংবাদপত্রে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ভারতের ভোটদাতারা যে দু’হাত বাড়িয়ে এ বার মোদীকে গ্রহণ করলেন না, তা অভাবনীয়। মোদী ও তাঁর দলের পক্ষে এটি বড় সেটব্যাক। প্রধানমন্ত্রী পদের দায়িত্ব নেওয়ার ১০ বছর পরে এই প্রথম মোদীকে ‘অরক্ষণীয়’ লাগছে।’ নিউ ইয়র্কের একটি সংবাদপত্রে লেখা হয়েছে, ‘মোদী তাঁর ‘অপরাজেয়’ ভাবমূর্তি হারিয়ে ফেলেছেন। ক্ষমতায় থাকতে গেলে এ বার তাঁর (শরিকদের) সাহায্য লাগবে।’ লন্ডনের একটি সংবাদপত্রে দাবি করা হয়েছে, ‘ভারতের দরিদ্রতম ভোটদাতারা মোদীর বিশাল জয়ের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন।’ জার্মানি ও ফ্রান্সের সংবাদপত্রের প্রতিবেদনেও বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার দিকটিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। জাপানের সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ‘৭৩ বছর বয়সি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় খুব হতাশ হয়েছেন।’
আজ দিনের শুরুতেই মোদীকে শুভেচ্ছা জানান ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। দু’জনের সহাস্য একটি ছবি এক্সে পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘নির্বাচনে জয়ের জন্য নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন। ইটালি ও ভারত, এই দু’দেশের মানুষের উন্নতির জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাব।’ ‘বন্ধু মেলোনি’কে পাল্টা ধন্যবাদ জানিয়ে মোদী বলেছেন, ‘দু’দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বে আমরা দায়বদ্ধ।’
এক্স হ্যান্ডলে মোদীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লিখেছেন, ‘এই ঐতিহাসিক নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স ও ভারতের ৬৫ কোটি ভোটারকে অভিনন্দন। সীমাহীন সম্ভাবনা দু’দেশের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে। আমাদের বন্ধুত্বও এগিয়ে চলবে।’
মোদীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আমেরিকার বিদেশ দফতরের সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন-ও। এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে জয়ের জন্য ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স ও নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন। ভারত সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী আমেরিকা।’’ বিদেশ দফতরের তরফে আলাদা একটি বিবৃতি জারি করেও মোদীকে অভিনন্দন জানানো হয়। দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এই বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সকে অভিনন্দন জানাচ্ছে আমেরিকা। ছ’সপ্তাহ ধরে আনুমানিক ৬৫ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নিলেন। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এটি সব থেকে বড় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রতি দায়বদ্ধতার জন্য আমরা ভারতের ভোটার, ভোটকর্মী, নাগরিক সমাজ ও সাংবাদিকদের সাধুবাদ জানাই।’
চিন-সহ ভারতের প্রায় সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানেরাই আজ সমাজমাধ্যমে মোদীকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন। তালিকায় রয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে, শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল (প্রচণ্ড) ও মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্ধকুমার জগন্নাথ।
অভিনন্দন জানিয়েছেন মলদ্বীপের চিনপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ়্জ়ুও। এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি ও বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ-কে অভিনন্দন জানাই। স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের দুই দেশ একযোগে কাজ করবে।’ মোদীকে অভিনন্দন জানিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘‘দুই দেশের মানুষের স্বার্থপূরণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী চিন।’’
মোদী ও বিজেপিকে তির্যক মন্তব্য করতে ছাড়েনি দুই পড়শি দেশ, পাকিস্তান ও চিনের সংবাদ মাধ্যম। চিনা সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসে লেখা হয়েছে, ‘চিনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রধানমন্ত্রী পোষণ করছিলেন, তা পূরণ করা এ বার তাঁর পক্ষে মুশকিল হবে।’ আর পাকিস্তানের ‘ডন’-এ লেখা হয়েছে, ‘ভারত ঘৃণাকে হারিয়ে দিল।’