ছবি সংগৃহীত।
হক্কানি নেটওয়ার্ক তালিবান সরকারের মধ্যমণি হওয়ার পর বিদেশনীতিতে কিছুটা রদবদল করা ছাড়া গত্যন্তর নেই বলেই মনে করছে মোদী সরকার।
প্রথমত, আফগানিস্তানের মাটি যাতে পাকিস্তান তথা আইএসআই যথেচ্ছ ভাবে সন্ত্রাস পাচারে ব্যবহার না করতে পারে, তার জন্য আগ্রাসী আন্তর্জাতিক প্রচার এবং বিভিন্ন শক্তিধর এবং আঞ্চলিক দেশগুলির সঙ্গে জোটবদ্ধতাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যেমন, আগামিকাল প্রথম বারের জন্য বসছে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ‘টু প্লাস টু’ বৈঠক।
দ্বিতীয়ত, আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ককে বহাল রেখেই অঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির দিকে ফিরে তাকানোর প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করছে সাউথ ব্লক। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, অতিরিক্ত আমেরিকা-নির্ভরতার কারণে রাশিয়া, ইরানের মতো কিছু দেশের সঙ্গে সম্পর্কে শৈত্য তৈরি হয়েছে নয়াদিল্লির। সেই সুযোগে ভারতের ঐতিহ্যগত মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। শিয়রে হক্কানি নেটওয়ার্ক আসার পর এখন এই সম্পর্কগুলি ফের মজবুত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে দিল্লি। পাশাপাশি, চিন সম্পর্কে অত্যন্ত সতর্ক থাকার কথা ভাবা হচ্ছে।
তালিবান সরকার আসার পরে ভারতের কূটনৈতিক ক্যালেন্ডারে তাই ব্যস্ততা স্পষ্ট। গত কালই চিন-রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ব্রিকসভুক্ত রাষ্ট্রগুলি যে দিল্লি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে, তাতে সন্ত্রাস নিয়ে ভারতের উদ্বেগের প্রতিফলন স্পষ্ট। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রাশিয়াও ভারতের সুরে সুর মিলিয়ে জানিয়েছে, প্রতিবেশী বা অন্য দেশে সন্ত্রাস পাচারের কাজে যাতে আফগানিস্তানকে ব্যবহার না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, অদূর ভবিষ্যতে রাশিয়াকে আরও বেশি করে পাশে পাওয়ার জন্য যত্নবান হতে দেখা যাবে বিদেশ মন্ত্রককে। কারণ, চিনের সঙ্গে তারা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলে। আবার ভূকৌশলগত কারণে তালিবান সরকারের সঙ্গেও রাশিয়ার সরাসরি সংযোগ থাকবে। আফগানিস্তানকে চাপ দেওয়া বা কিছু আদায় করার ক্ষেত্রে আমেরিকার কোনও গুরুত্ব থাকছে না আর। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া ভারতের পক্ষে অনেক বেশি কার্যকরী।
আগামিকাল প্রথম বারের জন্য ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ‘টু প্লাস টু’ পর্যায়ের বৈঠকে বসছে। অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রী ম্যারিস পেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটার ডাটন বৈঠক করবেন যথাক্রমে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে। সূত্রের খবর, আগামিকালের আলোচনায় সর্বাধিক গুরুত্ব পেতে চলেছে কাবুল পরিস্থিতি, তালিবান সরকার, হক্কানি নেটওয়ার্ক এবং সে দেশে চিন-পাকিস্তান অক্ষের বাড়বাড়ন্ত।
আফগানিস্তানে তালিবান আসার পর চিন তার কতটা সুযোগ নেবে, তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়াও চিন্তিত। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার দূত ব্যারি ও’ফারেল বলেছেন, “সমস্ত সম্প্রদায়কে সঙ্গে না নিয়ে যে ভাবে আফগানিস্তানে সরকার গঠিত হল, তাতে আমরা গভীর ভাবে হতাশ। হাজারা বা অন্য কোনও সম্প্রদায়ের মানুষ নেই, নারী প্রতিনিধি নেই, তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের হাতে মন্ত্রিত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা তালিবান সরকারের উপরে নজরে রাখছি। তাদের কার্যকলাপ দেখেই তালিবান নীতি স্থির করবে অস্ট্রেলিয়া।”
তালিবানের দখলে যাওয়া আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত ভঙ্গুর’ বলে মনে করছে ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনার সময়ে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তি বলেন, “প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। ভারত আশা করে আফগানিস্তানের মাটিকে সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার না-করতে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তালিবান পালন করবে।”