—প্রতীকী চিত্র।
ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে রক্তের খোঁজে চিন্তিত মুখের জটলা। কাউন্টার থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্ত পেতে হলে প্রয়োজন রক্তদাতার। মাথায় বাজ পড়ল যেন! কোথায় মিলবে রক্তদাতা? মাথা নীচু করে কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এলেন যুবক। সামনেই বসে থাকা পরিজনদের মুখেও কালো মেঘ। এমন সময়ে উড়ে এল প্রশ্ন , ‘কোন গ্রুপ লাগবে?’ উত্তর, ‘বি পজিটিভ’। ‘খুব কঠিন বুঝলেন’ বললেন প্রশ্নকর্তা। চুপ থেকে আবারও বললেন, ‘‘এক জন রক্তদাতা জোগাড় করতেই হবে।’’ ‘‘রক্তদাতা কোথায় পাব? আমাদের কেউ তেমন নেই’’, মাথা নাড়লেন হতাশ যুবক। এ বার অচেনা ব্যক্তির গলায় খানিক আশ্বাসের সুর, ‘ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কিন্তু টাকা লাগবে। চা-পানির ব্যবস্থা করতে হবে। আপনি হরিশ পাল মোড়ে অপেক্ষা করুন। আমি আসছি।’’
জরুরি পরিষেবার সামনের ছবিটাও একই রকম। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ওই চত্বরে ঘোরাঘুরি করতে দেখে এগিয়ে এলেন এক যুবক। ‘‘কোনও সমস্যায় পড়েছেন?’’ উত্তর, ‘‘এক জন রোগীকে সিসিইউতে ভর্তি করতে হবে।’’ যুবকের প্রশ্ন, ‘‘কোন নার্সিংহোমে আছে।’’ নার্সিংহোমের নাম শুনেই চিন্তিত গলায় বললেন, ‘‘এই মেরেছে। আপনার তো অনেক খরচ হয়ে যাবে।’’ পকেট থেকে বের করে দিলেন একটি ভিজিটিং কার্ড। বললেন, ‘‘এখন হবে না। বিকেল চারটার পরে আসুন। কিছু একটা ব্যবস্থা হবে। চা-পানির ব্যবস্থা করতে হবে কিন্তু।’’
কোচবিহার এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক বা জরুরি পরিষেবার মতো বিভাগের সামনে এমন দৃশ্য বিরল নয়। অভিযোগ, রোগীর পরিজনেরা ফাঁপরে পড়েছেন টের পেলেই আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে দালালেরা। পরিস্থিতি বুঝে বড়শি ফেলে মাছ তুলে নেয়।
কোচবিহার শহরের বাসিন্দা প্রবাল গোস্বামীর অভিযোগ, বহির্বিভাগেও দালাল-দৌরাত্ম্য কিছু কম নয়। অস্থি চিকিৎসা বিভাগের পাশে তাদের দেখা মেলে। বহির্বিভাগ থেকে রোগীকে তারা বাইরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, কমিশন নিয়ে নানাবিধ শারীরিক পরীক্ষার জন্য বাইরের প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে রোগীদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। প্রবালের ক্ষোভ , ‘‘ওই দালালেরা সব কমিশন খেয়ে কাজ করে। এদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’’
সূত্রের খবর, গত ডিসেম্বর মাসে হাসপাতাল থেকে এক ব্যক্তিকে ধরা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে রোগীকে বাইরের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগ ছিল। এ ছাড়াও, দালাল চক্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে কয়েক জন আটকও হয়। মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ নির্মল কুমার মন্ডল বলেন, ‘‘আমরা চাই, হাসপাতাল দালালমুক্ত হোক। সে জন্য নজরদারিও চলছে। প্রত্যেকের সহযোগিতা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট সময় অভিযোগ পেলে কাজে সুবিধে হবে।’’
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে