লেলিহান: জ্বলছে আমাজন অরণ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবি: টুইটার।
দুপুরেই নেমেছে ঘন অন্ধকার। ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছে ব্রাজিলের সাও পাওলোর আকাশ। মুখ ঢাকা পড়েছে সূর্যেরও।
একের পর এক আগুন লাগছে আমাজন অরণ্যে। লেলিহান শিখা আর ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে মহাকাশ থেকেও। আগুনের প্রকোপ এতটাই যে নিস্তার পায়নি ২৭০০ কিলোমিটার দূরের শহর সাও পাওলো। ব্রাজিলের রোরাইমা প্রদেশ থেকে পেরুর আকাশেও হানা দিয়েছে ধোঁয়া।
এ বছর আমাজন বৃষ্টি-অরণ্যে ৭২,৮৪৩টি দাবানলের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় যা ৮৩% বেশি! এবং ২০১৩-র তুলনায় দ্বিগুণ! দাবানলের এই প্রকোপ আগের সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে বলে দাবি ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ‘ইনপে’-র। আমাজনে নতুন ৯,৫০৭টি দাবানলের চিহ্ন গত বৃহস্পতিবারই উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়ে। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা-ও আমাজন অঞ্চলের দাবানলের বেশ কয়েকটি উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করেছে।
তমসাচ্ছন্ন: ধোঁয়ায় ঢেকেছে সাও পাওলো। সোমবার দুপুরে। ছবি: টুইটার।
বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিহত করতে অন্যতম ভরসা আমাজন অরণ্য। গোটা বিশ্বের ফুসফুস বলে পরিচিত এই অরণ্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ২০ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করে। সেখানে এ রকম লাগাতার দাবানলের ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে পরিবেশবিদদের। শুকনো বাতাসে দাবানল জ্বলে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সব দাবানলকেই ‘প্রাকৃতিক’ বলে মানতে নারাজ বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, অনেক সময়েই চাষের জন্য জমি বা খামার তৈরি করতে ইচ্ছাকৃত ভাবে জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। ব্রাজিল তথা আমাজন অঞ্চলও তার ব্যতিক্রম নয়। তা ছাড়া, বিভিন্ন খনিজ পদার্থের জন্য আমাজন অরণ্যে লাগাতার জঙ্গল সাফ করে খনন কাজ চালানো হয়। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি মিনিটে একটি ফুটবল মাঠের মাপের জঙ্গল কাটা হয় এখানে।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য দক্ষিণপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর নীতিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন পরিবেশবিদেরা। জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার আগে আন্তর্জাতিক হুঁশিয়ারির তোয়াক্কা না-করেই আমাজন অঞ্চলকে চাষ ও খনিজ উত্তোলনের কাজে ব্যবহারের কথা বলেছিলেন তিনি। এখন যদিও বোলসোনারোর বক্তব্য, ‘‘অযথা এ সব দোষারোপ করা হচ্ছে। এই সময়ে আগুন জ্বালিয়ে চাষের জমি তৈরি করেন চাষিরা। সেটাই রেওয়াজ।’’ ইনপে-র পরিসংখ্যানকে ‘ভুয়ো’ বলে উড়িয়ে দিয়ে ইনপে-র ডিরেক্টরকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট।