Turkey Syria Earthquake

‘আমারও একটা পরিবার ছিল, এখন ওই মাটির নীচে চাপা’! তুরস্ক, সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৭০০০ পার

তুরস্ক এবং সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫,০০০ ছাড়াল। আশঙ্কা, তা বেড়ে হতে পারে ২০ হাজার। আহত প্রায় ২০ হাজার। যে ক’টা হাসপাতাল দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেখানে আর তিলধারণের জায়গা নেই।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

আঙ্কারা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:২৯
Share:

সিরিয়া এবং তুরস্কের ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আহত প্রায় ২০ হাজার। ছবি: রয়টার্স।

চার দিক অন্ধকার। কনকনে ঠান্ডা। বরফ পড়ছে। তার মধ্যে বড় বড় চাঁই সরিয়ে উদ্ধার কাজ ক্রমেই অসম্ভব হয়ে উঠছে তুরস্কে। আর সে কারণে বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা। সোমবারের পর থেকে স্বজনহারা হাজার হাজার মানুষ। ২০ বছরের এক ছাত্র হাউহাউ করে কেঁদে বলে উঠলেন, ‘‘আমারও একটা পরিবার ছিল, ওই মাটির নীচে।’’

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চম বার কেঁপে উঠল তুরস্ক। তার জেরে ধসে পড়ল আরও কিছু বহুতল, বাড়ি, হাসপাতাল। তার জেরে আরও হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হলেন। জখম হলেন। তুরস্ক এবং সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ৭০০০ ছাড়াল। আহত প্রায় ২০ হাজার। যে ক’টা হাসপাতালে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেখানে আর তিলধারণের জায়গা নেই।

সোমবার ভোরবেলা তুরস্ক এবং সিরিয়ায় প্রথম ভূমিকম্পটি হয়। রিখটার স্কেলে তার মাত্রা ছিল ৭.৮। তার জেরে ভেঙে পড়েছিল হাজার হাজার বহুতল। দেশের কোনও হাসপাতালে এক চিলতে জায়গা খালি নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র আশঙ্কা, দুই দেশে ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়াতে পারে ২০ হাজার।

Advertisement

চাপ বাড়াচ্ছে তুরস্কের চরম ঠান্ডা। উষ্ণতা হিমাঙ্কের নীচে। এই পরিস্থিতিতে রাতে উদ্ধারকাজ চালানো এক প্রকার অসম্ভব। বিপাকে ঘরছাড়ারা। ঘর হারিয়ে চরম ঠান্ডায় সারা রাত খোলা আকাশের নীচে কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। ঠান্ডাতেও প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা। উদ্ধারকারীরা মনে করছেন, এই ঠান্ডার কারণে ধ্বংসস্তূপের নীচে আটক থাকা লোকজনের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্রমশ কমছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ। যুদ্ধের কারণে এমনিতেই সেখানে উদ্বাস্তু শিবিরে দিন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। সম্প্রতি সেখানে থাবা বসিয়েছিল কলেরা। তাতে মারা গিয়েছেন বহু মানুষ। এ বার গোদের উপর বিষফোঁড়া ভূমিকম্প। মঙ্গলবার তুরস্কের হাতে শহরে একটি বহুতলের ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে বার করা হয় ৭ বছরের এক শিশুকে। মুখে, চুলে, জামায় শুধুই ধুলো। উদ্ধারের পর তার প্রথম প্রশ্ন, ‘‘আমার মা কোথায়?’’ জবাবটা অবশ্যই জানা নেই উদ্ধারকারীদের।

ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস। এই দুই শহর এখন ধুলোয় মিশে গিয়েছে। একটি বহুতলও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে নেই। দুই শহরে ২০ লক্ষ মানুষের বাস ছিল। কত জন মারা গিয়েছেন, সেই হিসাব এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। ওই শহর ঘুরে সাংবাদিক মেলিসা সলমন বললেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।’’ সেই আতঙ্ক কাটিয়ে এখনও ঘরে ফিরতে পারেননি মুস্তাফা কোয়িঙ্কু। পাঁচ সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে সোমবার থেকে গাড়িতেই কাটাচ্ছেন ৫৫ বছরের মুস্তাফা।

তুরস্কের সানিলিউরফা শহরে বাস ওমর এল কুনেইদের। ভূমিকম্পে পরিবারের সকলকে হারিয়েছেন ২০ বছরের পড়ুয়া। তাঁর কথায়, ‘‘আমারও একটা পরিবার ছিল। এখন ধ্বংসস্তূপের নীচে।’’ ধ্বংসস্তূপে আটকে ছিলেন এক বান্ধবীও। কুনেইদ বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকাল ১১টা পর্যন্ত ফোনে কথা হয়েছে ওঁর সঙ্গে। তার পর সব শেষ। আর কোনও উত্তর নেই ওঁর। ও এখন ওই ধ্বংসস্তূপের নীচেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement