শিক্ষার অধিকার আদায়ে এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দেশের মেয়েরা। তার মধ্যেই মহাশূন্য ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন নমিরা সলিম। ইতিমধ্যেই তাঁকে দেশের প্রথম মহিলা মহাকাশচারী ঘোষণা করেছে পাকিস্তান সরকার। খুব শীঘ্র মহাকাশের পথেও পাড়ি দেবেন তিনি। তার আগে চিনে নিন নমিরা সলিমকে।
পাকিস্তানের প্রথম মহিলা মহাকাশচারী হওয়ার পাশাপাশি, উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে পা রাখা প্রথম মহিলা মহাকাশচারীও নমিরা। ২০০৭ সালে উত্তর মেরুতে পা রাখেন তিনি। তার পরের বছর যান দক্ষিণ মেরুতে।
এমনকি মাউন্ট এভারেস্টে স্কাইডাইভ করা প্রথম এশীয় মহিলাও তিনি। ২০০৮ সালে প্রথম বার মাউন্ট এভারেস্টে স্কাই ডাইভের আয়োজন হলে, তাতে অংশ নেন নমিরা।
তার আগেই অবশ্য মহাকাশে যাওয়ার প্রস্তুতি সেরে রেখেছিলেন নমিরা। ২০০৬ সালে মাহাকাশ ভ্রমণ সংস্থা ভার্জিন গ্যালাকটিকের প্রতিষ্ঠা করেন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী রিচার্ড ব্র্যানসন। ওই সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা নমিরা।
সেইসময় ২ লক্ষ পাউন্ডের বিনিময়ে মহাকাশে যাওয়ার টিকিট বুক করেন তিনি। সেইসময় মহাকাশে যাওয়ার জন্য প্রায় ৪৪ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল, যার মধ্য থেকে মাত্র ১০০ জনকে বেছে নেওয়া হয়। তবে তাতে জায়গা পেয়ে যান নমিরা।
মহাকাশে যাওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছেন নমিরা সলিম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভার্জিন সংস্থার তত্ত্বাবধানে উড়ানের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আলাদা করে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন পাকিস্তানেও। ২০০৮ সালে প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ নিজে তাঁর হাতে প্রশিক্ষণের শংসাপত্র তুলে দেন। অবশ্য তার আগেই, ২০০৬ সালের অগস্ট মাসে নমিরাকে দেশের প্রথম মহিলা মহাকাশচারী ঘোষণা করে পাক তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রক।
তবে শুধু মাত্র এই পরিচয়েই সীমাবদ্ধ নন নমিরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে স্নাতক তিনি। আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে। পাকিস্তানের প্রথম ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্টুডেন্টস ইন ইকনমিকস অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাও নমিরা। একাধিক বিষয়ে রাষ্ট্রুপুঞ্জের সঙ্গে মিলে মিশে কাজ করে ওই সংস্থা।
পাকিস্তানে জন্ম হলেও বিশ্বেরা নানা দেশে যাতায়াত রয়েছে নমিরার। বছরের বেশ খানিকটা সময় দুবাইয়েও কাটান তিনি। তবে ১৯৯৭ সাল থেকে মোনাকোয় পাকাপাকি ভাবে বাস করতে শুরু করেন। তাঁর বাবা পাক সেনায় কর্মরত ছিলেন। বাবাই তাঁকে মহাকাশ জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন বলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন নমিরা।
পাকিস্তান এবং মোনাকোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তাঁর। ২০১১ সালে মোনাকোয় পাকিস্তানের সাম্মানিক কনসাল জেনারেল নিযুক্ত হন তিনি। তবে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং ব্যবসাই সামলান না নমিরা সলিম। ভাস্কর্য নিয়েও সমান আগ্রহ রয়েছে তাঁর।
নিজে হাতে নানা ধরনের মূর্তি ও ঘর সাজানোর জিনিস তৈরি করেন নমিরা। তাতে মূলত শান্তির বার্তাই তুলে ধরেন। নক্ষত্র এবং নক্ষত্রপুঞ্জের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের অলঙ্কার সংস্থাও চালু করার করতে চলেছেন। সম্প্রতি ভারতের চন্দ্রযান-২ অভিযানেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।