দীর্ঘকায় শরীরই বিপদ ডেকে এনেছিল বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষের জীবনে। মাত্র ২২ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। সেই রবার্ট পার্শিং ওয়াডলোর সংক্ষিপ্ত জীবন দেখে নিন এক ঝলকে।
১৯১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এলটন ইলিনয়ে জন্ম রবার্ট ওয়াডলোর। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড়। জন্মের সময় ওজন ছিল ৩ কেজি ৯৪ গ্রাম।
কিন্তু আর পাঁচটা শিশুর মতো স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়নি রবার্টের। এক বছর বয়সে তাঁর উচ্চতা গিয়ে ঠেকে ৩ ফুট সাড়ে ৩ ইঞ্চিতে। ওজন বেড়ে দাঁড়ায় ২০ কেজি ৪০ গ্রামে।
মাত্র ৮ বছর বয়সে উচ্চতায় বাবা হ্যারল্ড ফ্র্যাঙ্কলিনকেও ছাড়িয়ে যান তিনি। সেই সময় তাঁর উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি। উচ্চতার জন্য স্কুলে রবার্টের বসার উপযোগী আলাদা চেয়ার তৈরি করা হয়।
পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে গ্রোথ হরমোনের নিঃসরণের হার বৃদ্ধি পেলেই মানবশরীরের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। চিকিৎসার ভাষায় এই রোগকে হাইপারপ্লেসিয়া বলা হয়। তার জেরেই ২২ বছর বয়সে রবার্টের উচ্চতা দাঁড়ায় ৮ ফুট ১১ ইঞ্চিতে। ওজন হয় ১৯৯ কেজি।
অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্কাউট সংস্থা রয়েছে। ১৩ বছর বয়সে তাতে যোগ দেন রবার্ট। সেই সময় তাঁর উচ্চতা ছিল ৭ ফুট ৪ ইঞ্চি। ১৯৩৬ সালে এলটন হাইস্কুল থেকে পাশ করেন রবার্ট। সেই সময় তাঁর উচ্চতা ছিল ৮ ফুট ৪ ইঞ্চি।
১৯৩৬ সালে রিংলিং ব্রাদার্স সার্কাসে যোগ দেন রবার্ট। ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেন এবং বস্টন গার্ডেনে শো করতে যান। সেখানে টুপি পরে, লেজ লাগিয়ে মানুষের মনোরঞ্জন করতে বলা হলে, তা মানেননি তিনি। বরং সাধারণ পোশাকেই দর্শকের সামনে হাজির হতেন।
রবার্টের পায়ের পাতা ছিল সাড়ে ১৮ ইঞ্চির। তার জন্য বিশেষ ভাবে জুতো তৈরি করাতে হত তাঁকে। ১৯৩৮ সালে একটি আন্তর্জাতিক জুতো সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয় তাঁর। তাদের কাছ থেকে বিনামূল্যে জুতো পেতে শুরু করেন রবার্ট।
সার্কাসে কাজ করার সুবাদে মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন রবার্ট। তবে কাজ মিটে গেলে, পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গেই সময় কাটাতে পছন্দ করতেন তিনি। অবসরে গিটার বাজাতে এবং ছবি তুলতে পছন্দ করতেন। অত্যন্ত বিনয়ী স্বভাবের জন্য তাঁকে ‘জেন্টল জায়ান্ট’ বলে ডাকা হত।
তবে এই উচ্চতার জন্য কম সমস্যায় পড়তে হয়নি রবার্টকে। অতিরিক্ত লম্বা হওয়ার জন্য তাঁর পায়ের জোর কমতে শুরু করে। পায়ের অনুভব ক্ষমতাও হারাতে শুরু করেন তিনি। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য পায়ের সঙ্গে ব্রেস লাগাতে হয় তাঁকে। তবে দুর্বল হয়ে পড়লেও কখনও হুইল চেয়ার ব্যবহারে করেননি রবার্ট।
এই ব্রেসই রবার্টের জীবনে দুর্ভাগ্য বয়ে আনে। ১৯৪০ সালের ৪ জুলাই মেইনস্টি ন্যাশনাল ফরেস্ট উৎসবে যোগ দেন তিনি। সেই সময় ব্রেস ভেঙে গোড়ালির কাছে ক্ষত তৈরি হয়, যা থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে রক্তেও।
এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু লাভ হয়নি। বরং আরও দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন তিনি। চিকিৎসা চলাকালীনই ১৫ জুলাই ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হয় রবার্টের। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাঁর শারীরিক বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। ১০ ফুট ৯ ইঞ্চি দীর্ঘ এবং ২ ফুট ৮ ইঞ্চি চওড়া কফিন তৈরি করে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।
রবার্টের স্মৃতিতে এলটন মিউজিয়াম অব হিস্ট্রি অ্যান্ড আর্টসের সামনে একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি রয়েছে।