কখনও গাছের ডালে বসে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া। কখনও ধূসর মাঠে সঙ্গীর সঙ্গে খুনসুটি। কোথাও আবার আলসেমির ঘুম ছেড়ে উঠে আড়মোড়া ভাঙার ছবি। এমন সব মজাদার দৃশ্যই লেন্সবন্দি করেছেন দুনিয়ার নানা প্রান্তের ওয়াইল্ডলাইফ ফোটোগ্রাফারেরা। লক্ষ্য কমেডি ওয়াইল্ডলাইফ অ্যাওয়ার্ডস।
চলতি বছরের কমেডি ওয়াইল্ডলাইফ অ্যাওয়ার্ডস-এর শিরোপা কে পাবেন? তা জানা যাবে আগামী ১৩ নভেম্বর। তবে তার আগে বুধবার এই প্রতিযোগিতার ফাইনালিস্টদের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। পাশের ছবিটা দেখুন, মনে হচ্ছে জাপানের এই ম্যাকাকু বাঁদরটি যেন হাত তুলে আশীর্বাদ করছে।
পরিবেশ সচেতনতায় কোনও ওজনদার কথাবার্তা বা ভারিক্কি বৈঠক নয়। বরং তার প্রসারে ৪০ জন ফোটোগ্রাফার ক্যামেরাবন্দি করেছেন বন্যপ্রাণীদের নানা মুডের ছবি। দেখুন, ঠিক যেন ঠাট্টা-তামাশায় মেতেছে দুই জেব্রা। হাসি যেন থামতেই চায় না!
ফি বছরই এই প্রতিযোগিতা হয়। তবে বছর চারেক আগে ২০১৫-তে প্রথম বার তা শুরু হয়েছিল। এমনটাই জানিয়েছেন, এই প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা পল জনসন-হিকস। টম সাল্লামের সঙ্গে মিলে তিনিই সামলাচ্ছেন এই প্রতিযোগিতা। এ কথা শুনে যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না পাশের ‘ব্যক্তি’র। তাই না!
কী ভাবে এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী নির্বাচন করা হয়? পল জনসন-হিকস জানিয়েছেন, আগামী ১৩ নভেম্বর বিচারকদের একটি প্যানেল তা স্থির করবেন। তাঁদের আতস কাচের তলাতেই থাকবে ৪০টি ছবি। তার মানে, এখনও সময় আছে! তত ক্ষণ আরও একটু ঘুমিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এমনটাই কি ভাবছে এই কাঠবেড়ালি?
এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর পুরস্কার কী? উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বিজয়ীকে একটা ট্রফি দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে কেনিয়ায় এক সপ্তাহের জন্য সাফারিতে যাওয়ার সুযোগও পাবেন তিনি। ‘‘শুনতে পাচ্ছ, কী বলছে?’’ নিজেদের বাসায় বসে এমনটাই কি বলছে এই দম্পতি!
পল জনসন-হিকস জানিয়েছেন, এই প্রতিযোগিতার আয়োজনে তাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। মূলত, বন্যপ্রাণ ও পরিবেশ নিয়ে সচেতনার প্রসারে কাজ করছে তারা। পাশের ছবিটা দেখুন, এমন কথা শুনে যেন মারপিট করতে শুরু করে দিল এরা। যেন বলছে, ‘‘দেখেছিস! ঝগড়াঝাঁটি না করে কেমন হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করা যায়!’’
পল জনসন-হিকস বলেন, ‘‘ফি বছরই এই প্রতিযোগিতা হয়। প্রকৃতির এই মজার দিকের ছবি দেখতেও ভাল লাগে।’’ তবে সমুদ্রের জলে আধডোবা এই দম্পতি বোধহয় বলতে চাইছে, ‘‘সে সব তো হল। তবে কেনিয়ার সফরে আমরা যেতে পারি কি?’’
ওই দম্পতি যা-ই বলুক না কেন, তাতে যেন একটুও উৎসাহ নেই এই মহাশয়ের। নিজের ঘরের আরাম ছেড়ে এক বারের জন্যও কোথাও যেতে রাজি নয় সে। পল জনসন-হিকস জানিয়েছেন, পরিবেশ সংরক্ষণ কী ভাবে করা যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁদের ওয়েবসাইটে।
এ ধরনের প্রতিযোগিতার আসল উদ্দেশ্যর কথাও শুনিয়েছেন হিকস। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সকলেই জানি, পরিবেশের কী দুর্দশা হচ্ছে। তবে তার প্রতিকারে আমাদের কী করতে হবে, তা-ও জানি আমরা।’’ এ সব কথায় বোধহয় একটু মুষড়ে পড়েছেন বাঁ-পাশের এই মহাশয়। আর কোনও কিছু যেন শুনতে চান না।
পরিবেশ বাঁচাতে সকলের সঙ্গেই হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। পাশের দম্পতির মতো এত ঝগড়াঝাঁটি করলে কিন্তু চলবে না।
পল জনসন-হিকস আশাবাদী, পরিবেশ রক্ষায় সকলেই দিকেই তাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িতে দেবেন। পাশের পাখিটি এ কথা শুনে যেন মাথা কাত করে সায় দিচ্ছে।
হিকস জানিয়েছেন, পরিবেশ রক্ষার কাজে তাঁরা সাহায্য করতে পারবেন। তা হলে তো এখন থেকেই কাজে লেগে পড়া উচিত। এমনটাই কী ভাবছেন বাঁ-পাশের ইনি?
পরিবশে রক্ষার কথা শুনে বোধহয় উৎসাহ আরও বেড়ে গিয়েছে এই পেঙ্গুইন দম্পতির। এখনই যেন কাজে লেগে পড়তে চায় তারা। হবে না-ই বা কেন! বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে তাদের পরিবেশও তো কম বিগড়ে যাচ্ছে না!
এই প্রতিযোগিতায় বিচারকেরা ছাড়াও অনলাইনে ভোটাভুটি করা যাবে বলে জানা গিয়েছে। নিজের প্রিয় ফোটোগ্রাফারকে জেতাতে একটা পিপলস চয়েস ক্যাটেগরিও করা হয়েছে। তবে তো একটা হাই-ফাইভ হয়েই যাক, কী বলেন!
পরিবেশ রক্ষার কাজে নামতে ঘরের বাইরে যেতে হবে না। পাশের ভালুকটির মতো নিশ্চিন্তে না ঘুমিয়ে তা নিজের ঘর থেকেও শুরু করা যায় বলে মনে করেন এই প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তারা। প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকজাত দ্রব্য বর্জন করা বা জলের অপচয় রুখেও তা শুরু করা যায় বলে জানিয়েছেন তাঁরা।