এফবিআই। ফাইল চিত্র।
পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র হয়ে চরবৃত্তির সন্দেহে আমেরিকায় পড়তে আসা তিন চিনা নাগরিককে গ্রেফতার করল এফবিআই। চতুর্থ জনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে মার্কিন ওই গোয়েন্দা সংস্থা। এফবিআই-এর ধারণা, চতুর্থ পড়ুয়া সান ফ্রান্সিসকোয় চিনা কনস্যুলেটের আশ্রয়ে রয়েছেন।
এফবিআই সূত্রে খবর, ধৃতদের বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে ওই তিন পড়ুয়ার ১০ বছরের জেল এবং ২ লক্ষ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানাও হতে পারে। আমেরিকার অ্যাসিসট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি জন সি ডেমার্সের দাবি, পিএলএ-র এই সদস্যরা নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে রিসার্চ ভিসার আবেদন করেছিলেন। তাঁর কথায়, “আমাদের উদার সমাজব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কব্জা করার ছক কষছে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি। এটা হতে দেওয়া যাবে না। তাই এফবিআই-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে তদন্ত শুরু করেছি।”
আমেরিকায় প্রতি বছর নানা দেশ থেকে বহু পড়ুয়া, শিক্ষাবিদ, গবেষক আসেন। চিন থেকেও এমন বহু পড়ুয়াও মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমাচ্ছেন। এফবিআই-এর ন্যাশনাল সিকিউরিটি ব্রাঞ্চের এগজিকিউটিভ অ্যাসিসট্যান্ট ডিরেক্টরের মুখেও একই অভিযোগ শোনা গিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, দেশের উদারনীতিকে ধ্বংস করার জন্য এ ভাবে অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে চিনা সরকার।
পিএলএ-র সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যে পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে তাঁদের মধ্যে এক জন হলেন জিন ওয়াং। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৯-এর ২৬ মার্চ আমেরিকায় আসেন তিনি। এফবিআই সূত্রে খবর, জিন-এর ভিসার আবেদনপত্রে লেখা ছিল, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান গবেষণার জন্য তিনি এসেছেন। তদন্তকারীদের দাবি, জিন-কে জেরা করে তাঁরা জানতে পেরেছেন, ২০০২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত পিএলএ-তে মেডিসিন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। তদন্তকারীদের আরও দাবি, নানা সময়ে বয়ান বদলেছেন জিন। কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি)-এর আধিকারিকদের আবার দাবি, গত ৭ জুন লস অ্যাঞ্জেলস বিমানবন্দরে জিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, পিএলএ-র ‘লেভেল ৯’ টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। যা সেনার মেজর পদমর্যাদার সমান। তাঁরা আরও দাবি করেন, এখনও পিএলএ-র সঙ্গে জড়িত জিন। কিন্তু সেটা অস্বীকার করছেন।
আরও পড়ুন: এই হোটেলের আসবাব থেকে দেওয়াল সবটাই সোনার, তৈরিতে খরচ দেড় হাজার কোটি
অভিযুক্তদের মধ্যে দ্বিতীয় জন হলেন হুয়ান ট্যাং। মার্কিন প্রশাসনের রেকর্ড অনুয়াযী, ২০১৯-এর অক্টোবরে ভিসার আবেদন করেছিলেন হুয়ান। সে বছরেরই ডিসেম্বরে আমেরিকায় আসেন তিনি। হুয়ানের বিরুদ্ধেও ভিসা নিয়ে তথ্য লুকনোর অভিযোগ উঠেছে। তদন্তকারীদের দাবি, হুয়ান পিএলএ-র বিমানবাহিনীর এক জন অফিসার। সেনার পোশাকে এয়ার ফোর্স মিলিটারি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ছবি এফবিআইয়ের হাতে এসেছে। গ্রেফতারি এড়াতে সান ফ্রান্সিসকোয় চিনা কনস্যুলেটে আশ্রয় নিয়েছেন হুয়ান।
চেন সঙ নামে আরও এক চিনা নাগরিকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছে। নিজেকে স্নায়ুবিশেষজ্ঞ হিসেবে ভিসায় পরিচয় দিয়েছেন চেন। কিন্তু তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, পিএলএ-র এক জন সক্রিয় সদস্য হিসেবেই আমেরিকায় পা রাখেন তিনি। শুধু তাই নয়, যে হাসপাতালে চেন কাজ নিয়েছিলেন সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও গোপনে পিএল-র হয়ে কাজ করছিলেন বলে তদন্তে দাবি করেছে এফবিআই। ধৃতদের মধ্যে আরও এক জন হলেন কাইকাই ঝাও। গত ১৭ জুন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের পরিচয় দিয়ে আমেরিকায় আসেন ঝাও। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, পিএলএ-র সায়েন্টিফিক রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন-এর হয়ে কাজ করেন। যা সরাসরি চিনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের সঙ্গে যুক্ত। পিএলএ-র হয়ে কাজ করার অভিযোগে জিন ওয়াং, চেন সঙ এবং কাইকাই ঝাও-কে গ্রেফতার করেছে এফবিআই। হুয়ান ট্যাঙকে গ্রেফতারের জন্য প্রস্তুতি চালানো হচ্ছে বলে এফবিআই সূত্রে খবর।