রমনার কালী মন্দিরের উদ্বোধনের পরে পুজো দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। শুক্রবার ঢাকায়। নিজস্ব চিত্র।
অনেকে বলছেন, এই কাজের জন্য ৫০ বছর অপেক্ষা করা উচিত হয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশে অর্ধশতাব্দীতে অনেক ধরনের সরকার এসেছে, কিন্তু কেউই পাকিস্তানি সেনাদের গুঁড়িয়ে দেওয়া রমনা কালী মন্দিরটি পুনর্গঠনের কাজে এগোয়নি। একটি ছোট্ট মন্দিরের মধ্যে বিগ্রহ স্থাপন করে এত দিন পুজো চলছিল। অবশেষে ভারত সরকারের অর্থ সাহায্যে নির্মাণ হওয়া মন্দিরটির নতুন ভবন এবং সম্প্রসারিত অংশের শুক্রবার উদ্বোধন করলেন ঢাকা সফররত রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছু পরে রমনা পার্কের পাশে ঢাকার সর্ববৃহৎ মন্দির কমপ্লেক্স এই কালীবাড়িটি ধ্বংসের আগে সেখানে গণহত্যা চালায় পাক সেনারা। ১৯৭১-এর ২৭ মার্চ পুরোহিত, ভক্তদের পাশাপাশি মন্দির কমপ্লেক্সে বসবাসকারী কয়েকটি পরিবারের মানুষকেও সে দিন দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরেছিল পাকিস্তানিরা। শতাধিক মানুষ সে দিন পাক বাহিনীর হাতে খুন হন। মূল মন্দিরটির সুউচ্চ মিনার বহু দূর থেকে দেখা যেত। প্রায় ৫০০ বছর আগে গঢ়বালের যোশীমঠ থেকে বাঙালি সাধু গোপাল গিরি এসে কালীমন্দিরটি এখানে প্রতিষ্ঠা করেন। হরিচরণ গিরি পরে মন্দির কমপ্লেক্সটি গড়ে তোলেন। মূল মন্দিরটি ছিল কাঠের। তাই কাঠগোলা কালীবাড়িও বলা হত সেটিকে। পাকিস্তানি সেনারা সাঁজোয়া গাড়ি ও ক্রেন নিয়ে এসে সেটিকে ধুলিসাৎ করেছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে ভারত সরকারের ৭ কোটি টাকা অনুদানে মন্দিরটির ভেঙে ফেলা অংশ পুনর্গঠন করা হয়েছে। ভক্তদের জন্য একটি অতিথি নিবাস তৈরি করা হয়েছে। নতুন করে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে মূল কালীমন্দিরটিকেও। এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ স্ত্রী সবিতা এবং কন্যা স্বাতীকে নিয়ে রমনা মন্দিরে আসেন রামনাথ কোবিন্দ। প্রথমে মন্দিরটির সংস্কারের নামফলকের উন্মোচন করেন। তার পরে মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন তিনি। গোটা চত্বর আগ্রহ নিয়ে ঘুরেও দেখেন রাষ্ট্রপতি।
এর পরে সফরকারী ভারতের রাষ্ট্রপতিকে তাঁর হোটেলে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কোবিন্দ তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং ভারতে সেই সময়ে সেই লড়াইয়ের প্রতি মানুষের বিপুল সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন। বলেন, “বাংলাদেশের বন্ধুদের আমি আশ্বস্ত করতে চাই, এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিকেই সমর্থন করে যাবে ভারত।” শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে ভাবে এগিয়ে চলেছে, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন কোবিন্দ। আশা প্রকাশ করেন, দু’দেশের প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় রেখে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও উষ্ণ ও মধুর হয়ে উঠবে।
এর পরে বেলা একটা নাগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছে ‘এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান’-এ ওঠেন রাষ্ট্রপতি। তাঁকে বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ দিল্লি ফেরেন কোবিন্দ।