১৯৮০-র পর থেকে পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এইচআইভি ভাইরাস। এই ভাইরাসের জেরে মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে এডস। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেয়। যার জেরে মৃত্যু পর্যন্ত হয় মানুষের। এখনও অবধি পৃথিবী জুড়ে সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই রোগের কারণে।
অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক বা রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় এই রোগ। বিশ্বের অনেক জনপ্রিয় সেলিব্রিটি আছেন, যাঁদের মৃত্যু হয়েছিল এডস বা অন্য কোনও যৌনসংক্রমিত রোগ থেকে। এক ঝলকে দেখে নিই সেই সব সেলিব্রিটিদের।
এই তালিকায় প্রথমেই আসবে দক্ষিণী অভিনেত্রী নিশা নুরের নাম। ‘কল্যানা অগতিগাল’ ও ‘আয়ার দ্য গ্রেট’ ছবির জন্য বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন নিশা। তামিল, মালয়ালম ছবির পাশাপাশি তেলুগু ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন তিনি।
সুপারস্টার রজনীকান্ত ও কমল হাসানের বিপরীতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। শোনা যায়, ‘আয়ার দ্য গ্রেট’ ছবির প্রোযোজক আর মোহন তাঁকে যৌন ব্যবসায় নামতে বাধ্য করেন। এর পর তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। এডসও ধরা পড়েছিল নিশার। অবশেষে ২০০৭-এ তামিলনাড়ুর একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।
আমেরিকান টেনিস তারকা আর্থার অ্যাশ। তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ টেনিস খেলোয়াড়, যিনি মার্কিন ডেভিস কাপ টিমে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসাবে উইম্বলডন ও ইউএস সিঙ্গল খেতাবও জিতেছিলেন। ১৯৮০-তে এ়ডসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুরক্ষিত যৌনতা নিয়ে বাকি জীবন প্রচার করেছিলেন তিনি। ১৯৯৩-এ নিউ ইয়র্কে মৃত্যু হয় তাঁর।
ব্রিটিশ রক ব্যান্ড কুইনের প্রধান গায়ক ফ্রেডি মার্কারি। গায়ক হিসাবে খ্যাতির শীর্ষে থাকতেন তিনি। ১৯৮৭-তে তাঁর এডস ধরা পড়ে। অবশেষে ১৯৯১-এ মৃত্যু হয় তাঁর। এইচআইভি-তে আক্রান্ত হওয়ার কথা মৃত্যুর ক’দিন আগে বিশ্বকে জানিয়েছিলেন তিনি।
কিথ অ্যালেন হ্যারিং। মার্কিন এই শিল্পী ও সমাজকর্মীর মৃত্যুও হয়েছিল এডসের কারণে। ১৯৯০-এ মৃত্যুর আগে এডস নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ার কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল তাঁর।
এরিক লিন রাইট। আমেরিকার এই জনপ্রিয় র্যাপারকে বিশ্ব চেনেন ইজি-ই নামে। ১৯৯৫-এ লস এঞ্জেলসের হাসপাতালে প্রবল কাশি ও হাঁপানি নিয়ে ভর্তি হন তিনি। সেখানে জানা যায়, তিনি এডসে আক্রান্ত। বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা এই র্যাপার সারা জীবন ধরে একাধিক সম্পর্কে জড়িত ছিলেন। মনে করা হয়, সেখান থেকেই এই যৌনরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।
আমেরিকান অভিনেতা টিমোথি মারফি। এডসে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ২৯ বছের মারা যান তিনি। শোনা যায়, উভকামী অভিনেতা ব্র্যাড ডেভিসের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ছিল তাঁর। ব্র্যাড এইডসে আক্রান্ত ছিলেন। সেখান থেকেই মারফি আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে সন্দেহ।
ব্র্যাড ডেভিস। এই আমেরিকার অভিনেতা উভকামী ছিলেন। ‘মিডনাইট এক্সপ্রেস’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তাঁকে মনে রেখেছেন সিনেমাপ্রেমীরা। ১৯৮৫-তে তাঁর এইচআইভি পজিটিভ পাওয়া গেলেও, বিষয়টি জনসমক্ষে আনেননি তিনি। এডস ধরা পড়ার পরও নিয়মিত মাদক সেবন করতেন তিনি। ১৯৯১-এ মাত্র ৪১ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তাঁর।
হলিউডের যখন সোনার সময়, তখন সেই সিনেমা জগতের মধ্যমণি ছিলেন রক হাডসন। ১৯৮৪-তে এডসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। ১৯৮১-তে হৃদ্পিণ্ডে বাইপাস অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। সে সময়ই তাঁকে রক্ত দেওয়া হয়েছিল। দাতার রক্ত থেকেই তাঁর শরীরে মারণ ভাইরাস প্রবেশ করে বলে মনে করা হয়।
কিউবা-আমেরিকান টেলিভিশন সেলিব্রিটি পেড্রো জামোরা। এমটিভির রিয়েলিটি শো-তে তাঁর উপস্থিতি নজর কেড়েছিল সকলের। সে সময়ের বিপুল জনপ্রিয় এই সেলিব্রিটি হলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি সমকামিতার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন। এঁরও মৃত্যু হয়েছিল এডসে আক্রান্ত হয়ে।
আমেরিকান ফ্যাশন মডেল জিয়া কারাঙ্গি। প্রথম সুপার মডেল হিসাবে ধরা হয় তাঁকে। মডেলিং কেরিয়ারে ভাটা পড়তেই মাদকাসক্ত হয়ে যান তিনি। নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে এসড ধরা পড়ে তাঁর। ১৯৮৬-তে মারা যান তিনি। তিনিই প্রথম মহিলা, যিনি এডসের কারণে মারা গিয়েছিলেন।
রিকি উইলসন। আমেরিকার এই মিউজিশিয়ান ‘বি৫২’ ব্যান্ডের গিটারিস্ট ছিলেন। ১৯৮৩-তে এডস ধরা পড়ে তাঁর। দু’বছর লড়াইয়ের পর ১৯৮৫-তে মাত্র ৩২ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তাঁর।
জনপ্রিয় বাস্কেটবল খেলোয়াড় ম্যাজিক জনসন। কেরিয়ারের চূড়ায় থাকার সময় সমকামিতার সম্পর্ক জড়িয়েছিলেন। একাধিক জনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন তিনি। ১৯৯১-এ এইচআইভি ধরা পড়ে তাঁর শরীরে। কিন্তু সেই এইচআইভি-র সঙ্গে লড়াই করেও বেঁচে রয়েছেন তিনি।
চার্লি শিন। একাধিক হিট ছবির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই মার্কিন অভিনেতার নাম। বছর চারেক আগে এক সাক্ষাৎকারে নিজের এডস রোগের কথা প্রকাশ্যে আনেন তিনি।