মে মাসের শুরুর দিকে আফগানিস্তান থেকে সেনা সরাতে শুরু করে ন্যাটো। প্রাথমিক ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয় ন’হাজার ৬০০ সেনা, তার মধ্যে দু’হাজার ৫০০ জন আমেরিকার সেনা ছিলেন। তারপরেই হেলমন্দ প্রদেশে আফগানিস্তান সরকারের সঙ্গে লড়াই শুরু করে তালিবান।
মে মাসের ৮ তারিখে কাবুলে এক ভয়ানক বিস্ফোরণ হয়। মৃত্যু হয় ৮৫ জনের। বেশির ভাগই স্কুল পড়ুয়া। চলতি বছরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা বলে জানায় আফগান প্রশাসন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই বিস্ফোরণের মাধ্যমেই আফগানিস্তান দখল শুরু করে তালিবান।
মে মাসের মাঝামাঝি কন্দহর থেকেও সেনা তুলে নিতে শুরু করে আমেরিকা। কাবুলের কাছে ওয়ার্দাক জেলা দখল করে নেয় তালিবান। তার পর জুন মাসের মাঝামাঝি উত্তরের একের পর এক প্রদেশ আফগান প্রশাসনের হাত থেকে বেদখল হতে শুরু করে।
জুলাই মাসের ২ তারিখে ন্যাটো সেনা তুলে নেয় বগরম প্রদেশ থেকে। আফগানিস্তানের এই বৃহত্তম বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে সেনা সরে যাওয়ার দু’দিনের মাথায় পঞ্জওয়াই জেলা দখল করে নেয় তালিবান। জুলাই মাসের ৯ তারিখে তালিবান ঘোষণা করে, ইরান সীমান্তের ইসলাম কালা দখলে এসেছে তাদের।
১৪ জুলাই পাকিস্তান সীমান্তে স্পাইন বোল্ডাক এলাকা দখল করে তালিবান। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সংযোগের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেই তালিবান আফগানিস্তানের প্রধান শহরগুলি দখলের দিকে নজর দেয়। সেই তালিকায় ছিল কন্দহর, লস্কর গাহ, হেরাট ও কাবুলের নাম।
১৬ জুলাই তালিবান হত্যা করে দানিশ সিদ্দিকিকে। বিখ্যাত এই চিত্র সাংবাদিকের মৃত্যুতে বিশ্ব জুড়ে আলোচনা শুরু হয়।
অগস্ট মাসের ৩ তারিখে কাবুলে আফগান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও একাধিক সাংসদের বাড়িতে হামলা চালায় তালিবান। তিন দিনের মাথায় ৬ অগস্ট আফগান সরকারের জনসংযোগ আধিকারিককে গুলি করে হত্যা করা হয়।
অগস্ট মাসের ১১ তারিখ উত্তরের মাজার-এ-শরিফ শহরে যান আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। কিন্তু সে দিনই কুন্দুজ প্রদেশে শয়ে-শয়ে আফগান সেনা আত্মসমর্পণ করেন। পতন হয় সে দেশের নবম প্রদেশের।
অগস্ট মাসের ১২ তারিখে কাবুল থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে গজনি প্রদেশ দখল করে নেয় তালিবান। একই দিনে পতন হয় হেরাটের। পরের দিন, ১৩ অগস্ট তালিবানের দখলে চলে যায় দক্ষিণের প্রদেশ কন্দহর ও লস্কর গাহ।
১৪ অগস্ট, শনিবার তালিবানের দখলে যায় মাজার-এ-শরিফ। তিন দিন আগেই এই প্রদেশে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। পতনের সঙ্গে সঙ্গেই কাবুলের খুব কাছে এসে পড়ে তালিবান।
রবিবার, অর্থাৎ ১৫ অগস্ট সকালে জালালাবাদ শহর দখল করে তালিবান। তারপর একমাত্র পড়ে থাকে আফগান রাজধানী কাবুল। ইতিমধ্যে ২৬ প্রদেশ দখলে রয়েছে বলে দাবি করা হয় তালিবানের তরফ থেকে। রবিবার দুপুরের পর থেকে খবর আসতে থাকে, কাবুলের মুখে দাঁড়িয়ে আছে জঙ্গিরা। শেষ শহরটি বেলা বাড়তে দখল করে তালিবান।