এক হাজার বছরেরও বেশি আগে পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল প্রাচীন রোমের ফালেরি নোভি শহর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটি চলে গিয়েছিল মাটির নীচে। সেখানেই এখনও রয়েছে নগরীর বেশির ভাগ অংশ। পুরাবিদরা সেই অবস্থাতেই তৈরি করেছেন এর মানচিত্র।
ভূঅভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা প্রাচীন শহরের কাঠামোয় ধরা পড়েছে মন্দির ও স্নানাগারের অস্তিত্ব। আধুনিক রোম থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে ইটালির গ্রামীণ অঞ্চলেই রয়েছে এর ধ্বংসাবশেষ।
শহর এখনও সে ভাবে গ্রাস না করায় ধ্বংসস্তূপের উপরে বা চারপাশে বহুতল বিশেষ নেই। ইতিহাসবিদদের ধারণা, মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকা শহরের মানচিত্র তৈরি সম্পূর্ণ হলে গবেষণার অনেক নতুন দিক খুলে যাবে।
খ্রিস্টের জন্মের ২৪১ বছর আগে তৈরি হওয়া এই শহরে জনজীবন ছিল খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী অবধি। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা এই শহর ছিল ছোট। মোট আয়তন ছিল মাত্র ০.১ বর্গমাইল বা ০.৩ বর্গকিলোমিটার।
প্রাচীন এই শহর, ফালেরি নোভির সন্ধানে উনিশ শতকেই শুরু হয়েছিল অনুসন্ধান। নব্বইয়ের দশকে করা হয় ম্যাগনেটিক সার্চ। তার ফলে অনেকটাই স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়েছিল মাটির নীচে চাপা পড়া নগরীর কোথায় কোথায় কী আছে।
অত্যাধুনিক গবেষণার ফলে নতুন করে মানচিত্র তৈরি করতে সুবিধে হয়েছে। রাডার এবং রেডিয়ো ওয়েভ পালসের সাহায্যে প্রাচীন নগরীর ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করা গিয়েছে। স্ক্যান করে পাওয়া খণ্ডচিত্র মিলিয়ে মিশিয়ে মানচিত্র তৈরি করছেন পুরাবিদরা।
খনন করলে যে দৃশ্য পাওয়া যায়, প্রায় সেই ছবিই ফুটে উঠেছে ত্রিমাত্রিক মানচিত্রে। সেই ছবি অনুযায়ী, নগরীর দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথের পশ্চিমে একটি মন্দিরের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। মন্দিরে ওঠার সিঁড়ি, খোলা চত্বর, এমনকি পুজোর বেদির আভাসও মিলেছে।
পাশাপাশি, বাজার এবং বড় স্নানাগারের কাঠামোর নিদর্শনও পাওয়া গিয়েছে বলে জানান ইতিহাসবিদরা। তবে সবথেকে বড় বিস্ময় অপেক্ষা করে আছে ফালেরি নোভি-র পানীয় জলের যোগান ব্যবস্থায়।
মানচিত্র দেখে গবেষকদের মত, এই শহর তৈরির আগেই মাটির নীচে বিস্তার করা হয়েছিল পানীয় জলের পাইপ। তার উপর ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছিল পুরো জনপদ। কিন্তু প্রাচীন রোমের অন্য শহরে খননে ধরা পড়েছে, শহরের রাজপথের উপরেই জলের পাইপের অস্তিত্ব।
এই আবিষ্কার প্রাচীন রোমানদের নির্মাণকৌশলের নতুন দিক খুলে দিল বলে মত বিশেষজ্ঞদের। আজ থেকে ২২০০ বছর আগে মাটির তলায় জল সরবরাহের পাইপের বিন্যাস তারা কোন প্রযুক্তিতে করত, তা আজও রহস্য। রোমানদের সেই কৌশল আধুনিক যুগে গবেষণার বিষয়। (ছবি:শাটারস্টক)