ভাইরাল একটি মেসেজে দাবি করা হচ্ছে ব্রেকফাস্টের আগে কালো জিরে খেলেই বাঁচবেন কোভিড-১৯ থেকে
কী ছড়িয়েছে?
একটি মেসেজ এবং একটি ভিডিয়ো, যেখানে বলা হচ্ছে, ‘কালো জিরে থেকে ১০০ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাওয়া যাচ্ছে। তাই ব্রেকফাস্টের আগে মধু আর গরম জলের সঙ্গে খেয়ে ফেলুন ৭টি কালো জিরে (কোনও কোনও মেসেজে আবার বলা হচ্ছে ৭ গ্রাম)। তা হলেই বাঁচবেন কোভিড-১৯ থেকে’।
শেয়ার করা হচ্ছে ফক্স নিউজের একটি ভিডিয়োও যার সঙ্গে সুপার ইমপোজ করা হয়েছে একটি গ্রাফিক। যাতে বলা হচ্ছে, নতুন এক গবেষণা অনুয়ায়ী কালো জিরে এবং তার তেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
কোথায় ছড়িয়েছে?
হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে অনেকেই শেয়ার করেছেন এই মেসেজ। শুধু শেয়ার করাই নয়, অনুরোধ জানানো হচ্ছে এই তথ্য ছড়িয়ে দিতে।
এই তথ্য কি সঠিক?
না, কালো জিরে যে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করে তার কোনও প্রমাণ নেই। আর এতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনও থাকে না।
সত্যি কী এবং আনন্দবাজার কী ভাবে তা যাচাই করল?
মুসলিম, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে কালো জিরের ওষধি গুণ বেশ সমাদৃত। উত্তর আফ্রিকার বাসিন্দাদের মধ্যেও এর কদর রয়েছে। এর নির্যাস সর্দি এবং বিভিন্ন অ্যালার্জির ক্ষেত্রে কার্যকরী। তবে তা যে কোভিড-১৯ এর ভাইরাসকে ঠেকাতেও কার্যকরী, তার কোনও প্রমাণ নেই। কালো জিরের বৈজ্ঞানিক নাম নাইজেলা স্যাটিভা। এর থেকে নাইজেলিডিন এবং আলফা হেরেডিন বলে দু’টি নির্যাস পাওয়া যায়। গবেষক সেলিম বুশেটুফ এবং নুরউদ্দিল মাসুমের সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে এই নির্যাস এবং কিছু ওষুধের একটি যৌগ তৈরি করে যদি কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপর প্রয়োগ করা যায় তা হলে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা ক্লোরোকুইনের কাছাকাছি এবং হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের চেয়ে বেশি। তাই কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় কার্যকর হওয়ার ভাল সম্ভাবনা আছে। তবে এই নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন। এমনটাই বলা হয়েছে ওই গবেষণায়। নীচে একটি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দেওয়া হল। আমরা সেই গবেষণাপত্রটিও ঘেঁটে দেখি। ২০১৪ সালে ফার্মাকগনসি পত্রিকায় প্রকাশিত সেই গবেষণাপত্রে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কালো জিরে এবং ক্লোরোকুইনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়। ছ’বছর আগে কোভিড-১৯ রোগটির অস্তিত্বই ছিল না, ফলে ওই গবেষণাটিও কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে খাটে না। কোনও গবেষণাপত্রেই দাবি করা হয়নি যে কালো জিরে থেকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাওয়া যায়। ফলে ভাইরাল হওয়া ওই পোস্টটির দাবিরও যৌক্তিকতা নেই।
হোয়াটস্অ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারে যা-ই দেখবেন, তা-ই বিশ্বাস করবেন না। শেয়ারও করে দেবেন না। বিশেষত এই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় তো তো নয়ই। এ ভাবেই ছড়িয়ে পড়ে ভুয়ো খবর। যাচাই করুন। কোনও খবর, তথ্য, ছবি বা ভিডিয়ো নিয়ে মনে সংশয় দেখা দিলে আমাদের জানান এই ঠিকানায় feedback@abpdigital.in