তিরিশ বছর পর দেখা

ফেসবুক মিলিয়ে দিল দুই বোনকে

কী হয়েছিল সে দিন? ৬৯ বছর ঘুমিয়ে থাকার পরে জেগে উঠেছিল কলম্বিয়ার আগ্নেয়গিরি নেভাদো দেল রুইজ স্টার্টোভলক্যানো। গলগল করে বেরিয়ে আসা লাভার উত্তাপে গলে গিয়েছিল হিমবাহ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বোগোটা (কলম্বিয়া) শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:০৪
Share:

এক সঙ্গে। জ্যাকলিন আর লরেনা।

সিনেমার মতো। তবে সব চরিত্র কাল্পনিক নয়!

Advertisement

সালটা ১৯৮৫। কলম্বিয়ার আর্মারোতে বেড়ে উঠছিল দুই বোন। এক জনের বয়স তিন। অন্য জনের নয়। কিন্তু সব কিছু ওলোট-পালট হয়ে গেল ১৩ নভেম্বর।

কী হয়েছিল সে দিন? ৬৯ বছর ঘুমিয়ে থাকার পরে জেগে উঠেছিল কলম্বিয়ার আগ্নেয়গিরি নেভাদো দেল রুইজ স্টার্টোভলক্যানো। গলগল করে বেরিয়ে আসা লাভার উত্তাপে গলে গিয়েছিল হিমবাহ। আর তার সঙ্গেই পাহাড়ের গা বেয়ে মাটিধস। ওই আগ্নেয়গিরির পাদদেশে ছিল ছোট্ট শহর আর্মারো। ওই মাটিধসের তোড়েই ভেসে গিয়েছিল ছোট্ট আর্মারো। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জনবসতি ছিল প্রায় ২৯ হাজার লোকের। আর মারা গিয়েছিলেন ২২ হাজারেরও বেশি। সেই বিপর্যয়েই ছাড়াছাড়ি জ্যাকলিন আর লরেনার।

Advertisement

দশ নয়, কুড়ি নয়, মাঝে কেটেছে তিন দশক। দুই বোন জ্যাকলিন আর লরেনা স্যানচে়জ ছিল কলম্বিয়ার দুই প্রান্তে। কারও সঙ্গে কারও যোগাযোগ ছিল না। থাকবেই বা কী করে! তত দিনে বদলে গিয়েছিল দু’জনেরই ঠিকানা। এমনকী মা-বাবাও। দু’জনকেই দত্তক নিয়েছিল দু’টি আলাদা পরিবার।

সময় যেমন থেমে থাকে না, থেমে থাকেনি তাদের জীবনও। তবে দু’জনের খোঁজে দু’জনেই হন্যে হয়ে ঘুরত। কে জানত, আবার দেখাও হয়ে যাবে ত্রিশ বছর পরে!

আশা ছিল হয়তো দেখা হবে। আর তাই হল। পরিবারের খোঁজে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন লরেনা। আর সেই পোস্ট দেখেই এগিয়ে এলেন জ্যাকলিন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে ওই ভিডিও খুঁজে পান জ্যাকলিন। ‘‘এই ক’দিনে আমি অনেক বার ভিডিওটা দেখেছি। আর প্রত্যেক বার চেঁচিয়ে উঠেছি, ওই তো আমার বোন!’’— সংবাদসংস্থাকে বলছিলেন জ্যাকলিন। তবে আশার সঙ্গে ছিল ভয়। জ্যাকলিনের কথায়, ‘‘খুব উত্তেজিত ছিলাম, ভয়ও পাচ্ছিলাম। হঠাত্ খুঁজে পেলেও যদি আমাকে সে না মেনে নেয়। কিছুই বলা যায় না।’’

আর্মারো দুর্ঘটনায় স্বজনহারানো পরিবারদের জন্যই একটি উদ্যোগ নিয়েছিল ‘আর্মান্ডো আর্মারো ফাউন্ডেশন’। সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যেই এগিয়েছিল সেই উদ্যোগ। লরেনা আর জ্যাকলিন পরস্পরকে খুঁজে পাওয়ার পরে তাঁদের ডিএনএ পরীক্ষারও দায়িত্ব নেয় ওই সংস্থা। ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁদের সেই পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায়।

ত্রিশ বছরে জ্যাকলিন ও লরেনার জীবন পাল্টে গিয়েছে অনেকটাই। জ্যাকলিনের দুই ছেলে-মেয়ে। লরেনা এক মেয়ের মা। জ্যাকলিনের ঠিকানা এখন বোগোটা। লরেন থাকেন কলম্বিয়ার আর এক শহরে। তবে তাঁদের বাবা-মায়ের খোঁজ মেলেনি।

বোনকে ফিরে পেয়ে গলা বুজে আসে ৩৯ বছরের জ্যাকলিনের। ‘‘এই মুহূর্তটিকে ভাষায় ব্যক্ত করা খুব কঠিন। খুব আনন্দ হচ্ছে, আবার ভয়ও। কে জানে ও আমাকে ভালবাসবে কি না!’’ একই সুর বোন লরেনার গলাতেও— ‘‘৩০ বছর পরে দিদির খোঁজ পেলাম। এই মুহূর্তটা খুব সুন্দর আবার দুঃখেরও বটে!’’

৩০ বছর বয়স বেড়েছে দু’বোনের। বড় হয়েছেন দু’টি আলাদা পরিবারে, আলাদা ভাবে। পরস্পরকে কি মানিয়ে নিতে পারবেন? ফিরে যেতে পারবেন তিন দশক আগের সেই ছোটবেলায়? সংশয় থাকছেই। তবে খুঁজে পাওয়ার এই
মুহূর্তটা আনন্দের। মুখে স্মিত হাসি। শক্ত করে ধরা হাত। চেনা এই ছোঁয়াকেই ৩০ বছর ধরে খুঁজছিলেন দুই সহোদরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement