স্পর্ধা: ১৯৬৭তে, পেন্টাগনে প্রতিবাদে জান রোজ ক্যাস্মির। —ফাইল চিত্র।
‘আই ওয়াক বাই ইয়র সাইড!’
বা ‘আমি তোমার পাশেই পথ হাঁটছি’! সমাজমাধ্যমে কলকাতার রাত দখল অভিযানের খবর পড়ে এটুকুই লিখেছেন তিনি। এ দেশের স্বাধীনতা দিবসের মধ্যরাতে কলকাতার প্রতিবাদের ছবি জান রোজ ক্যাস্মিরের কাছেও পৌঁছে গিয়েছে।
নাম শুনলে অনেকেই নাও চিনতে পারেন তাঁকে। কিন্তু যদি বলা হয়, ভিয়েতনাম যুদ্ধের ‘ফ্লাওয়ার গার্ল’ বা পুষ্পকন্যার কথা। তা হলে অনেক প্রবীণের চোখই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এবং প্রেরণা পাবেন নবীনেরাও। তাঁদেরও মনে পড়ে যাবে ইন্টারনেট যুগের বহু বছর আগে সারা দুনিয়া জুড়ে যথার্থই ভাইরাল একটি ছবির কথা। ১৯৬৭ সালে ফরাসি আলোকচিত্রী মার্ক রিবু তোলেন ছবিটি। আমেরিকান সেনাঘাঁটি পেন্টাগনের সামনে সেনাবাহিনীর উদ্ধত বেয়নেটের সামনে ক্রিসানথিমাম গুচ্ছ হাতে ডাগর চোখের এক নবীনা। সপ্তদশী মেয়ের নিষ্পাপ চোখের সামনে বেয়নেটধারী আমেরিকান সেনাও যেন নতমুখ। জান রোজ ক্যাস্মির সেই সপ্তদশী। আজকের সাউথ ক্যারোলাইনাবাসী ৭৪ বছরের বৃদ্ধার বাকি সব পরিচয়ই ঘোর মিথ্যে।
সমাজমাধ্যমে কলকাতার প্রতিবাদের আহ্বায়ক রিমঝিম সিংহকেও ফেসবুক মেসেঞ্জারে আলাদা করে লিখেছেন জান। ‘তোমার কথা যা শুনেছি, আমায় স্পর্শ করেছে’! কলকাতা বন্ধু সুব্রত ঘোষের কাছেই প্রথম এ শহরের মেয়েদের প্রতিবাদের কথা শুনেছেন জান। পেশায় স্থপতি সুব্রত ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়কার প্রতিবাদের কথা নিয়ে বছর আটেক আগে জানের একটি বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকেন।
রিমঝিমদের এই প্রতিবাদে কি খানিকটা ৫৭ বছর আগে তাঁর নিজের সঙ্গেই দেখা হচ্ছে জানের?
শুক্রবার, কলকাতার সন্ধ্যায় ফোনে, এই প্রশ্ন শুনে জান বললেন, “আমি চিরকাল উঠে দাঁড়ানোয় এবং মুখ খোলায় বিশ্বাস করি। প্রতিবাদ না-করলে তুমিও সমস্যার কারণ। কারণ, প্রতিবাদ ছাড়া স্থিতাবস্থা পাল্টায় না।” একদা পেশায় ‘ম্যাসাজ থেরাপিস্ট’ জান এখন কন্যা লিজার কাছে থাকেন। লিজা কিছু দিন আগে মায়ের স্মৃতিভ্রংশের কথাও লিখেছিলেন। এ দিন কিন্তু জান বললেন, “আমি এখনও গান্ধীর পথে প্রতিবাদে বিশ্বাস করি।” রিমঝিমকে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী লড়াই নিয়ে ‘মেনশ ইন দ্য ট্রেঞ্চেস’ বলে একটি বই পড়তে বলেছেন জান। কিছু দিন আগে হাঁটুতে শল্যচিকিৎসার কথা বললেন মাঝ সত্তরের তরুণী। তবে তাঁর কথায়, “আমি এখনও হুইলচেয়ারে বসে প্রতিবাদ করতে যেতে পারি।” কয়েক বছর আগেও জান বলতেন, ৯০ বছর বয়সেও পরমাণু চুল্লির সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করব। ট্রাম্প-বিরোধী প্রতিবাদের অন্যতম মুখ জান এখনও প্রত্যয়ী, আমেরিকায় ট্রাম্প যুগ ফিরবে না।
কলকাতার প্রতিবাদে মেয়েদের নেতৃত্বের কথা শুনেও উচ্ছ্বসিত ভিয়েতনাম যুদ্ধের পুষ্পকন্যা। বললেন, “এমন যুদ্ধে তো এটাই হওয়া উচিত।” জানের ভালবাসার কথায় রিমঝিমও অভিভূত। বলছেন, “সব আন্দোলনের প্রতিবাদী পূর্ব নারীরা এ ভাবেই আমাদের আলো দেখান।”