Xenophobia

বিদেশি-বিদ্বেষে ভুগছে ইউরোপ, আমেরিকাও

চিয়াং একা নন। আমেরিকা-ইউরোপ প্রবাসী চিনা নাগরিকদের প্রতি মুহূর্তে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বেজিং শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২০ ০৫:১৭
Share:

ছবি এপি

কাজের সূত্রে সানফ্রান্সিকোয় থাকেন রজার চিয়াং। এক দিন অফিসে যেতে ট্রেনে চেপেছেন। দেখেন, এক শ্বেতাঙ্গ মহিলা আড়চোখে তাকিয়ে। চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। রুমাল বার করে নাক-মুখ ঢেকেও নেন তিনি। হেসে ফেলে চিয়াং মহিলাকে বলেন, ‘‘চিন্তা নেই। আমার করোনা-সংক্রমণ হয়নি।’’ মহিলা ততটাই আড়ষ্ট মুখে জবাব দেন— ‘‘আমার জাতিবিদ্বেষ নেই, কিন্তু অসুস্থ হতে চাই না।’’

Advertisement

চিয়াং একা নন। আমেরিকা-ইউরোপ প্রবাসী চিনা নাগরিকদের প্রতি মুহূর্তে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। রাস্তাঘাট, অফিস, সর্বত্র। মারণ ভাইরাস ‘কোভিড-১৯’-এর সংক্রমণে সন্ত্রস্ত গোটা বিশ্ব। মৃতের সংখ্যা ৩২০০ ছাড়িয়েছে। চিনেই মারা গিয়েছেন ২৯১২ জন। গত বছর ডিসেম্বরের শেষে ভাইরাসটি প্রথম ছড়ায় চিনের উহান থেকে। তার পর চিন-সীমান্ত পেরিয়ে এক এক করে আক্রান্ত অন্তত চল্লিশটি দেশ। চিনের বাইরে এশিয়ায় সব চেয়ে খারাপ অবস্থা ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়ার। ইউরোপে বিপদ ঘনিয়েছে ইটালিতে। সে দেশে ১০০ জন মারা গিয়েছেন। কিন্তু তদন্তে দেখা গিয়েছে প্রতিটি দেশে সংক্রমণ ঘটেছে চিন থেকেই। যেমন, ইউরোপে প্রথম মৃত্যু ফ্রান্সে। এক চিনা পর্যটক প্যারিসে বেড়াতে এসে মারা যান। সেই শুরু। রাষ্ট্রপুঞ্জ যতই বলুক না কেন, চিনের পাশে দাঁড়ানো উচিত, সাধারণ মানুষ তা মানছেন না। চিন ও তার সংলগ্ন দেশের মানুষ দেখলেই ক্ষোভ উগরে দিতে দ্বিধা করছেন না ইউরোপীয় বা মার্কিনরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস তার ‘সহোদর ভাইটিকেও’ ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্বজুড়ে। ‘ভাইরাল’ হয়ে গিয়েছে জ়েনোফোবিয়া বা বিদেশি-আতঙ্কও।

গত সোমবার জোনাথন মোক নামে বছর তেইশের এক যুবক যেমন জানান তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। সিঙ্গাপুরের ওই যুবক লন্ডনে থেকে পড়াশোনা করছেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি অক্সফোর্ড স্ট্রিটে রাত ন’টা নাগাদ তাঁকে ঘিরে ধরে মারধর করে এক দল লোক। তারা বলে, ‘‘তোমার করোনাভাইরাস আমাদের দেশে চাই না।’’ জোনাথনের মুখের হাড় ভেঙে গিয়েছে। চোখের তলায় রক্তজমাট। ফেসবুকে নিজের অবস্থার ছবি পোস্ট করেছেন তিনি।

Advertisement

বিদেশি-আতঙ্কের শিকার অ্যালিসন পার্কও। আমেরিকায় থাকেন। ব্রুকলিন থেকে ওয়াশিংটন যাচ্ছিলেন। মেট্রোয় একটি লোক তাঁর দিকে তাকিয়ে চেঁচাতে থাকেন— ‘‘চিনে ফেরত যাও। তোমাদের সোয়াইন ফ্লু চাই না।’’ অ্যালিসন জানান, এক সপ্তাহ পরেই সানফ্রান্সিসকোয় হেনস্থার শিকার হন তিনি। একটি লোক তাঁকে বলতে থাকে, ‘‘চিনে ফিরে যাও।’’ কথা না শুনলে গুলি করার হুমকিও দেন তিনি।

বাচ্চারাও রেহাই পাচ্ছে না। স্কুলে ‘করোনা’ বলে ডাকা হচ্ছে বলে কেঁদে ফেলে ১৩ বছরের সারা অ্যালগার্ড। নর্থ ব্রুনসউইকের বাসিন্দা রেবেকা ওয়েন জানান, তাঁর ৯ বছরের ছেলেকে বলা হয়েছে, ‘তুমি চিনা, তোমার নিশ্চয় করোনাভাইরাস রয়েছে।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement