Earthquake in Turkey and Syria

কন্যার হাতটুকুই শুধু বেরিয়ে ধ্বংসস্তূপের বাইরে, ছুঁয়ে বসে নির্বাক পিতা, কেঁদে ফেললেন চিত্র সাংবাদিক

সোমবার ভূমিকম্পে ঘুমের ঘোরেই বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে তুরস্ক এবং সিরিয়ায়। তাঁদের মধ্যেই এক জন হান্সারের কন্যা ইরমাক। ছবিতে স্পষ্ট, ঘুমোনোর সময়ই চাঙড় ভেঙে পড়েছিল ইরমাকের উপর।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কাহরামানমারাস (তুরস্ক) শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:০৭
Share:

কন্যার মুখটা দেখতে না পেলেও এক পিতা তাঁর সন্তানের হাত চেপে ধরে যেন বোঝাতে চাইছেন, ‘যেতে নাহি দিব!’ ছবি: এএফপি

সাদা একটা গদি। তার নীচে থাকা খাটটি ভেঙে বসে গিয়েছে। তার ঠিক উপরেই বিশাল বড় বড় কংক্রিটের চাঙড়। চাপা পড়ে থাকা সেই বিছানার ফাঁক গলে একটি হাত চোখে পড়েছিল চিত্র সাংবাদিকের। পুরো হাত নয়, কব্জি পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। সেই হাত ধরে পাশে বসে রয়েছেন চল্লিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। বেরিয়ে থাকা আঙুলগুলির উপর সস্নেহে নিজের হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন।

Advertisement

শান্ত অথচ যন্ত্রণাবিদ্ধ মুখ। কনকনে ঠান্ডাতেও তাঁর কোনও ভ্রুক্ষেপ লক্ষ করলেন না সাংবাদিক। ওই হাত ধরে ঠায় বসে ছিলেন। দৃশ্যই বলে দিচ্ছিল ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে বেরিয়ে থাকা ওই হাত তাঁর কোনও প্রিয় মানুষের। ৬০ মিটার দূর থেকে ক্যামেরার লেন্সটা জ়ুম করেছিলেন সাংবাদিক। ওই দৃশ্য দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারেননি। চোখ বেয়ে নেমে এসেছিল অশ্রুধারা।

অ্যাডেম আটলান। সংবাদ সংস্থা এএফপি-র চিত্র সাংবাদিক। তুরস্কের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত শহর কাহরামানমারাসে ছুটে গিয়েছিলেন। সেখানেই ক্যামেরাবন্দি করেন এই মর্মান্তিক দৃশ্য। যে মানুষটির ছবি অ্যাডেম ক্যামেরাবন্দি করেছেন, তিনি মেসুট হান্সার। অ্যাডেম তাঁর ছবি তুলছেন, সেটি লক্ষ করেছিলেন হান্সার। শান্ত এবং কাঁপা কাঁপা গলায় এবং ইশারায় অ্যাডেমকে কাছে আসতে বলেন তিনি। অ্যাডেম কাছে যেতেই হান্সার ক্ষীণ কণ্ঠে ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে উঁকি মারা হাতের দিকে দেখিয়ে বলেন, “আমার কন্যার ছবিটা তুলুন।” কথাটা শুনে হাত কেঁপে গিয়েছিল অ্যাডেমের। তিনি বলেন, “হান্সারের মুখে ওই কথা শোনার পর ভাষা হারিয়ে গিয়েছিল আমার। ওই ছবি তুলছিলাম ঠিকই, কিন্তু মনের ভিতরে আমার যেন সব কিছু ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছিল। নিজেকে সামলাতে পারিনি। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়েছিল।”

Advertisement

একটু ধাতস্থ হয়ে হান্সারকে তাঁর নাম জিজ্ঞাসা করেন অ্যাডেম। মেয়ের নামও জিজ্ঞাসা করেছিলেন। সাদা রঙের গদিটা দেখিয়ে হান্সার বলেন, “এটাই ছিল আমার মেয়ের শোওয়ার ঘর। এখানেই ছিল আমাদের বাড়ি।” এর পরই তিনি জানান, কন্যার নাম ছিল ইরমাক। বয়স ১৫। এটুকু বলেই চুপ করে গিয়েছিলেন হান্সার। চারপাশে নিস্তব্ধতা। অ্যাডেম জানান, এই পরিস্থিতিতে হান্সারকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেননি। ইচ্ছাও হয়নি। বেশি কথা বলাও যাচ্ছিল না। কারণ তখন ধ্বংসস্তূপের নীচে আওয়াজ শোনার চেষ্টা করছিলেন স্বজনহারা আর উদ্ধারকারীরা।

সোমবার ভূমিকম্পে ঘুমের ঘোরেই বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে তুরস্ক এবং সিরিয়ায়। তাঁদের মধ্যেই এক জন হান্সারের কন্যা ইরমাক। ছবিতে স্পষ্ট, ঘুমোনোর সময়ই চাঙড় ভেঙে পড়েছিল ইরমাকের উপর। সেই ধ্বংসস্তূপের ফাঁক দিয়ে শুধু মেয়ের কব্জিটা দেখতে পেয়েছিলেন হান্সার। তার পর থেকেই মেয়েকে আগলে বসে ছিলেন। আর শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন কখন উদ্ধারকারীরা আসবেন, কখন তাঁর আদরের কন্যাকে ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করবেন। কন্যার মুখটা দেখতে না পেলেও এক পিতা তাঁর সন্তানের হাত চেপে ধরে যেন বোঝাতে চাইছেন, ‘যেতে নাহি দিব!’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement