ঢাকের বোল, সাবেকি প্রতিমা, সুচারু আয়োজন দেখে কে বলবে, দেশের বাইরে কোনও শহর!
দূর থেকে ভেসে আসছে, ‘জাগো, জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী’! মা ডাকছে, ‘‘কী রে, উঠবি না? মহালয়া শুরু হয়ে গেল তো!’’
—‘‘উফ! ওটা মহালয়া নয় মা, মহিষাসুরমর্দিনী’’, চোখ কচলে উঠতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল! স্বপ্ন!
এই নিয়ে পঞ্চম বছর পুজোয় কলকাতার বাইরে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দূর থেকে প্রতি মুহূর্তে প্রত্যক্ষ করছি, পুজো আসছে, অল্প অল্প করে সেজে উঠছে আমার তিলোত্তমা— তখন শহরের বাইরে থাকাটা সত্যিই বেদনার। কর্মসূত্রে আয়ারল্যান্ডে ঘাঁটি গেঁড়েছি। আস্তানা রাজধানীর ডাবলিন শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে, অ্যাথলোন নামে একটা ছোট শহরে। হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস, তবে বাসিন্দা একুশ হাজারের বেশি নয়। পুরো দেশের জনসংখ্যা কলকাতার চেয়ে ঢের কম।
অ্যাথলোনে দুর্গাপুজো না হলেও ডাবলিনে দু’জায়গায় হয়। আয়ারল্যান্ড দুর্গোৎসব কমিটি ২০১৭ থেকে পুজো করছে। পুজো হয় ডাবলিনের পশ্চিমে, লিসি নদীর উত্তর কূলের কমার্শিয়াল রোয়িং ক্লাবের কমিউনিটি সেন্টারে। কোভিড-কড়াকড়ির জন্য ২০২০ সালে দুর্গাপুজো স্থগিত ছিল। আবার নতুন উদ্যমে হয় ২০২১-এ। ঢাকের বোল, সাবেকি প্রতিমা, সুচারু আয়োজন দেখে কে বলবে, দেশের বাইরে কোনও শহর! বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে প্রবাসীরা আসেন। পুজোর আনন্দ তারিয়ে উপভোগ করতে দেখি আইরিশদেরও।
গত বছর একদিন থাকতে পেরেছিলাম। এ বছর একটা দিনও ফস্কে যেতে দেব না। তা ছাড়া প্রবাসে বাস করা খাদ্যরসিক বাঙালি কি আর প্রতিবছর কচুরি, আলুর দম, চাটনি, পায়েস সহযোগে ভোগের রান্না ছেড়ে থাকতে পারে?