প্রতীকী ছবি।
দক্ষিণে অ্যান্টার্কটিকা, পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে চিলি ও পশ্চিমে ‘জ্যেষ্ঠভ্রাতা’ অষ্ট্রেলিয়ার মাঝে দু’টি দ্বীপে এখন বসন্তের প্রথম আভাস। ও দিকে, উত্তর গোলার্ধে শরতের নীল আকাশের ভাসমান মেঘ কৈলাসে পৌঁছে মাকে মনে করিয়ে দেয়— পুত্রকন্যা-সহ বাপের বাড়ি যাওয়ার সময় এগিয়ে এল যে!
বছরের এই সময়ে ম্যাগনোলিয়া, ক্যামেলিয়া, ড্যাফোডিল ও আরও হরেক ফুল দিয়ে বসুন্ধরা অকৃপণ হাতে নানা রঙের ডালি সাজিয়ে দেন এখানে। নব জীবনের বার্তার সঙ্গে এই ঋতু যেন নিয়ে আসে নতুন আলোকরশ্মি। তাই আজকের এই কোভিড পরিস্থিতি সত্ত্বেও নিউজ়িল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা।
এ বার আমাদের দুর্গোৎসবের ষষ্ঠ জন্মদিন। ১৫ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধেবেলা আমরা সকলে বসব শনিবার, অর্থাৎ ১৬ অক্টোবরের পুজোর প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে। প্রতিবারের মতো এ বারও আমাদের সেই একই হলঘর ভাড়া করা হয়েছে, যদিও এ বার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রশস্ত মাঠটিও নেওয়া হয়েছে এবং সঙ্গে বিস্তীর্ণ কারপার্কটি তো আছেই। এ বার এই মাঠে একটি মেলার পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
বসবে স্ন্যাক্সের স্টল, বাচ্চাদের ‘বাউনসি কাসল’, ফেস-পেন্টিংয়ের আয়োজন ইত্যাদি। জলখাবারের ভার সদস্যরাই নিয়েছেন।
খোলামেলা জায়গায় দরকার হলে বেশি লোকজন বসতে পারবেন, তাই এই ব্যবস্থা।
আমাদের প্রতিমাটি পুরনো। কিন্তু মা এ বার সাজবেন সম্পূর্ণ নতুন সাজে। তার সঙ্গে হলটিও এ বার সাজাবে পেশাদার ডেকরেটর। পুজোর পুরোহিত আমাদের এক জন সদস্যা, যিনি প্রথম বছর থেকেই পুজো সুসম্পন্ন করে আসছেন। এক জন মহিলা এই ভূমিকা পালন করায় আমরা খুবই গর্ব বোধ করি।
পুজো, অঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণের সঙ্গে-সঙ্গেই খাদ্যরসিক বাঙালি রসনা পরিতৃপ্তিতে মনোনিবেশ করেন। সূর্যোদয়ের পরেই তাই কয়েক জন উৎসাহী পুরুষ সদস্য প্রতি বছরের মতো এ বারও ঠিক চলে যাবেন কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রান্নাঘরে, যেখানে বড় আকারে রান্নাবান্নার সমস্ত সুবিধেই রয়েছে। তৈরি হয়েছে অতি উপাদেয় মেনু, যদিও সব নিরামিষ। বাঙালি মিষ্টি তৈরির ভার নিয়েছেন দু’একজন উৎসাহী মহিলা।
উত্তর ভারতীয় মিষ্টিরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কয়েক জন। শুনেছি, জিলিপিও থাকবে!
রসনা পরিতৃপ্তি ও সংস্কৃতি— এ দু’টি বাদ দিয়ে বঙ্গসন্তানের জীবন অনেকটাই অর্থহীন হয়ে যায়। তাই বিকেলে কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে অবশ্যই। পুজোয় এই শহরের সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ আমন্ত্রিত হন আমাদের আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান করার জন্য। বিচিত্রানুষ্ঠানে যোগদান করতে আগ্রহ থাকে অবাঙালি, এমনকি অভারতীয় ছেলে-মেয়েদেরও। সকল সম্প্রদায়ের সুরের লহরে আমাদের এই বহুজাতিক ক্রাইস্টচার্চ শহরের সাংস্কৃতিক বাতাবরণ আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। এ বার সম্পদশালী কৃষ্টির বুনন আরও দৃঢ় হবে, আমাদের সেই বাসনাই রইল।
রবিবার মায়ের বরণ ও মেয়েদের সিঁদুরখেলা। কিঞ্চিত ভারাক্রান্ত মনে মাকে বিদায় দিয়ে প্রতিবার বলি, আগামী বছর আবার এসো, মা। এ বার থাকবে বাড়তি একটা আবদার— কোভিড বিহীন শান্তিপূর্ণ পৃথিবী চাই আমরা সকলে।