—প্রতীকী ছবি।
দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ার ঋতুচক্র পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গার বিপরীত। এ দেশে ডিসেম্বরে বরফ বা স্লেজগাড়ি অমিল, সে সময়ে এখানে গ্রীষ্মের দাবদাহ। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর শীত শেষ হয়ে সবে বসন্তের আগমন। তাই স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে দুর্গাপুজো শরতের নয়, বসন্তের উৎসব।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধান শহরগুলিতে কম-বেশি দুর্গাপুজো হয়। কিন্তু সব চেয়ে বেশি পুজো হয় সিডনি ও মেলবোর্নে। এই শহরগুলি এতটাই বিস্তৃত যে, এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত প্রায় একশো কিলোমিটার (অর্থাৎ কলকাতা থেকে খড়্গপুর)। মেলবোর্নে ৮-১০টি সর্বজনীন দুর্গাপুজো হয়। সেখানকার সব চেয়ে পুরনো পুজোটি সাড়ে তিন দশক ধরে হয়ে আসছে, নবীনতম পুজোটির বয়স দু’বছর। আর একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, তা হল অস্ট্রেলিয়ার জনগণনায় বাঙালি বলতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বোঝায়। ভারতীয় বাঙালিরা ‘ইন্ডিয়ান’। তাই এখানে সব বাঙালি দুর্গাপুজো করেন, এটা হয়তো ১০০ শতাংশ ঠিক নয়।
দুর্গাপুজোয় ছুটি না থাকায়, এখানে পুজোগুলি হয় সপ্তাহান্তে। কোনও স্কুলবাড়ি বা কমিউনিটি হল ভাড়া করে। পরিবেশগত বিধিনিষেধের জন্য প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় না। সেগুলি রেখে দেওয়া হয় পরের বছরের জন্য। সাধারণত, শুক্রবার বিকেল থেকে পুজো শুরু হয় আর রবিবার দুপুরে শেষ করতে হয়। পুজোর শেষে স্কুলবাড়ি বা কমিউনিট হল পরিষ্কার করে দিতে হয়। ঠিক মতো পরিষ্কার করা না হলে, জরিমানা করা হয়। শুক্র এবং শনিবার স্থানীয়দের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকে। এ ছাড়া দু’বেলা থাকে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা। এর জন্য আগে থেকে কুপন সংগ্রহ করতে হয়। পুজোর ভোগ ও খাওয়াদাওয়া হয় বুফেই।
অস্ট্রেলিয়ায় এখন বহুমাত্রিক সংস্কৃতি। এখন প্রতি পুজোতেই স্থানীয় কাউন্সিলর বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করেন। এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়াও করেন তাঁরা।
আমরা বর্তমানে যেখানে থাকি ক্র্যানবোর্ন, সেটি মূল মেলবোর্ন থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। এই অঞ্চলের সব ক’টি পুজোই হয় শহরে বাইরে যেখানে জনবসতি গড়ে উঠেছে। এই দূরত্ব অবশ্য পুজোর আনন্দে অন্তরায় হয় না। পূর্ব পরিচিতদের সঙ্গে দেখা, নবাগতদের সঙ্গে আলাপে-মেলামেশায় কেটে যায় পুজোর দিনগুলি। এই প্রবাসে এটাই বা কম কী!