ফাইল চিত্র।
নীলাভ আকাশে শুরু হয়ে গিয়েছে সাদা মেঘের আনাগোনা। শরতের আগমন বলে দিচ্ছে— বছর ঘুরে দুর্গাপুজো আবার দোরগোড়ায় ।
গত বছর অতিমারির প্রকোপে সারা বিশ্বের স্বাভাবিক জীবনযাপন বিধ্বস্ত হয়েছিল। অন্য অনেক কিছুর মতো পুজোও হয়ে উঠেছিল ‘ডিজিটাল’, মা এসেছিলেন ‘ভার্চুয়ালি’, আমরা আরাধনা করেছিলাম নেট মাধ্যমে। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর সে অভিজ্ঞতার পরে এ বছর মায়ের আবার তথাকথিত ‘স্বাভাবিক’ আগমন তাই একটু বেশিই আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের।
ডুসেলডর্ফে এ বছর দুর্গাপুজো হচ্ছে করোনা সংক্রান্ত সমস্ত বিধি-নিষেধ মেনে, অত্যন্ত সতর্ক ভাবে। বর্তমানে জার্মানিতে যে কোনও সামাজিক জমায়েতে মেনে চলা হচ্ছে সরকারি স্বাস্থ্য দফতর দ্বারা নির্ধারিত ‘থ্রিজি’ নিয়ম— ‘গেইমপ্ফট’, ‘গেনেসেন’ এবং ‘গেটেস্টেড’। জার্মান ভাষায় এই শব্দ তিনটির মানে— জমায়েতে অংশ নিতে প্রয়োজন দু’টি টিকাকরণ, কোভিড-জয়ী হওয়ার প্রমাণ অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করা করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট।
দুর্গাপুজোতেও এই নিয়মের অন্যথা হবে না। পরিমিত লোকসমাগমের মধ্যে দিয়ে ডুসেলডর্ফে এ বছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে দু’টো দুর্গাপুজো। ফলে এখানকার সংস্কৃতিপ্রিয় প্রবাসী বাঙালিরা প্রয়োজনীয় সামাজিক দূরত্ববিধি বজায় রেখে নির্বিঘ্নে আনন্দে মেতে উঠতে পারবেন। পুজোর পাঁচ দিন দর্শনার্থীর সংখ্যা নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে যাতে বেশি না হয়ে যায়, সে জন্য থাকছে আগে থেকে পরিকল্পিত ভাউচার কিনে পুজোর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার ও আনন্দ উপভোগ করার সুবিধা।
প্রত্যেক বছরের মতন এ বছরও কলকাতা থেকে আসছেন ঠাকুরমশাই। করোনা সংক্রান্ত নানা বিধিনিষেধ কাটিয়ে, উল্লিখিত ‘থ্রিজি’ নিয়মের গণ্ডি পেরিয়ে তাঁর এখানে চতুর্থীর দিন এসে পৌঁছনোর কথা।
মহাষষ্ঠীর সকালে ঘটস্থাপন ও মায়ের বোধন দিয়ে শুরু হবে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত উৎসবের সূচনা। সপ্তমীতে কলাবৌ স্নান, মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি ও সন্ধিপুজো, মহানবমীর মহাভোজ ও দশমীতে ধুনুচি নাচ, সিঁদুরখেলা ও বিজয়াতে মিষ্টিমুখ করার পাশাপাশি উপরি পাওনা— প্রতিদিন সন্ধ্যায় আয়োজিত রকমারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং পুজোর আড্ডা ।
ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এই সময়ে অনুষ্ঠিত নবরাত্রি উৎসবে অনুপ্রাণিত হয়ে সপ্তমীর সন্ধ্যায় থাকছে ডান্ডিয়া নাচের জমজমাট আয়োজন। একই মঞ্চে অষ্টমীর সন্ধ্যায় থাকছে লোকাল ব্যান্ডের জনপ্রিয় গানের পরিবেশনা এবং একটি কৌতুক নাটক। মহানবমীর আনন্দে বিশেষ মাত্রা যোগ করতে থাকছে সাবেকি সাজপোশাকের ফ্যাশন শো। প্রতিদিনই থাকছে আরও নানা রকম অনুষ্ঠান ও খাওয়াদাওয়ার এলাহি ব্যবস্থা। এ সবের মধ্যে দিয়েই দশমীতে ‘ফুড ফেস্ট’ আনন্দমেলার সঙ্গে চলে আসছে মাকে বিদায় জানানোর পালা।
সকলের একটাই প্রার্থনা— পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠুক, আসছে বছর খুশির বার্তা নিয়ে মাস্কহীন অবয়বে আবার এসো মা।