মুগল সম্রাট শাহজাহান তৈরি করেছিলেন তাজমহল। আগরায় বহাল তবিয়তে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য এই স্থাপত্য। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তাজমহলের কথা আপনি জানেন? যে তাজমহলের জাঁকজমক এবং গ্ল্যামার এক সময় চোখ ধাঁধিয়ে দিত, সেই রিসর্টটাই হঠাৎ এক দিন বন্ধ হয়ে গেল! কেন? দেখতেই বা কেমন ছিল সেই তাজমহলের অন্দর?
১৯৮৩-তে আমেরিকার নিউ জার্সির আটলান্টিক সিটিতে প্রাসাদোপম এই হোটেলটি তৈরির পরিকল্পনা করেন জেমস ক্রসবি। আগে থেকেই তিনি বেশ কয়েকটি পাঁচতারা হোটেলের মালিক ছিলেন। সেই সময় ‘তাজমহল’ বানানোর জন্য বাজেট ধরা হয় প্রায় ২৫ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা।
কিন্তু ১৯৮৬তে ক্রসবির মৃত্যু হয়। ফলে হোটেলটি বানানোর দায়িত্ব হাতবদলে আসে তৎকালীন নামজাদা ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। পুরো মালিকানা যদিও তাঁর ছিল না। ওই প্রজেক্টের আরও কয়েক জন শেয়ার হোল্ডার ছিলেন।
ওই রিসর্ট যখন বানানো শেষ হয়, তখন দেখা গেল খরচ হয়েছে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা।
‘তাজমহল’ রিসর্টটি গড়ে উঠেছিল প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট জায়গার উপরে।
এত টাকা বিনিয়োগ করেও ১৯৮৮-তে এসে দেখা গেল, তেমন লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছে না ‘তাজমহল’। কিছু দিনের মধ্যে কোম্পানি কার্যত দেউলিয়া হয়ে রিসর্টটি বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়।
এই সময়ে হাল ধরেন ট্রাম্প। কোম্পানির সমস্ত শেয়ার কিনে নিয়ে ঢেলে সাজান রিসর্টিকে। ২ এপ্রিল, ১৯৯০ ফের খোলে তাজমহল।
রিসর্টে ২ হাজারেরও বেশি শোওয়ার ঘর ছিল। ছিল মাস্টার বেডরুমের মতো বিলাসবহুল সুইট।
প্রায় ৩ হাজারেরও বেশি কর্মী কাজ করতেন এই রিসর্টে। প্রত্যেকের জীবন বিমা এবং পেনশনের ব্যবস্থা ছিল।
এই রিসর্টের প্রধান আকর্ষণ ছিল রয়্যাল ক্যাসিনো।
এ সবের মাঝেই রিসর্টটি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। ১৯৯০ থেকে ২০১৬— বার বার আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে এই রিসর্টে। ফলে মাঝে মাঝেই রিসর্টে ধর্মঘট করতেন কর্মীরা। চলত কর্মবিরতি।
২০১৪-তে এসে ট্রাম্প এই রিসর্টের দায়িত্ব আর নিতে চান না। যদিও চেয়ারম্যান পদ থেকে অনেক আগেই, সেই ২০০৪ সালে তিনি ইস্তফা দিয়েছিলেন।
সব মিলিয়ে অবশেষে ২০১৬-র অক্টোবরে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায় এই ‘তাজমহল’। পরে যদিও এই রিসর্ট খোলে, তবে তার নাম যায় বদলে।
২৭ জুন, ২০১৮, ফ্লোরিডার হার্ড রক কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়া এই রিসর্ট নতুন ভাবে চালু করে। তারা এই রিসর্টের নাম দেয় ‘হার্ড রক হোটেল অ্যান্ড ক্যাসিনো’।