ছিলেন স্লোভেনিয়ান মডেল। হয়েছেন আমেরিকার ফার্স্ট লেডি। বিবাহসূত্রে পেয়েছেন মার্কিন নাগরিকত্ব। মেলানিয়া ট্রাম্প-ই দ্বিতীয় মার্কিন ফার্স্ট লেডি, যিনি আমেরিকার বাইরে জন্মগ্রহণ করেছেন। এবং প্রথম মার্কিন ফার্স্ট লেডি, যাঁর মাতৃভাষা ইংরেজি নয়।
মেলানিয়ার জন্ম ১৯৭০ সালের ২৬ এপ্রিল, স্লোভেনিয়ার নোভো মেস্টো শহরে। তখন স্লোভেনিয়া ছিল যুগোশ্লাভিয়ার অংশ। তাঁর বাবা ছিলেন গাড়ি ও মোটরবাইকের ডিলার। মা বাচ্চাদের পোশাকের নকশা তৈরি করতেন। মায়ের কাছেই ফ্যাশনে হাতেখড়ি মেলানিয়ার।
সেভনিকা এবং লুবলিজানা শহরে কেটেছে মেলানিয়ার শৈশব ও কৈশোর। লুবলিজানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্কিটেকচার ও ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করেন মেলানিয়া। কিন্তু কোর্স সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি ছেড়ে দেন।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে শুরু করেছিলেন মডেলিং। ১৬ বছর বয়সে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন পেশাদার মডেল হিসেবে। তার দু’বছর পরে ইতালির মিলানের নামী মডেলিং এজেন্সির সঙ্গে তাঁর চুক্তি হয়।
এরপর প্যারিস ও মিলানে মডেলিং শুরু করেন মেলানিয়া। সে সময় তাঁর আলাপ হয় পাওলো জাম্পোলির সঙ্গে। পাওলো ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বন্ধু। পাওলোর কথায়, আরও উজ্জ্বল কেরিয়ারের জন্য মেলানিয়া চলে আসেন আমেরিকায়।
আমেরিকার ম্যানহাটন শহরে মেলানিয়ার থাকা ব্যবস্থা করে দেন পাওলো। এরপর ১৯৯৬ সালে ‘ম্যাক্স’, ‘জি কিউ’-এর মতো ফ্যাশন পত্রিকায় মডেলিং করেছেন তিনি। জি কিউ-এর প্রচ্ছদে হিরের গয়নার জন্য ন্যুড মডেলিং-ও করেছিলেন তিনি।
১৯৯৮ সালে মেলানিয়ার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তৎকালীন রিয়েল এস্টেট শিল্পপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তখনও দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা মেপলস-এর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি ট্রাম্পের।
ট্রাম্প-মার্লা বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয় ১৯৯৯ সালে। তারও পাঁচ বছর পরে এনগেজড হন ট্রাম্প-মেলানিয়া। বয়সে ২৪ বছরের বড় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ২০০৫-এ বিয়ে করেন মেলানিয়া। তাঁর প্রথম বিয়ে হলেও এটা ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৃতীয় দাম্পত্য। মার্লার আগে তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন ইভানা জেলনিকোভা।
ট্রাম্প-মেলানিয়ার রাজসিক বিয়েতে আমন্ত্রিত ছিলেন আমেরিকার তাবড় সেলেব্রিটিরা। ২০০৬ সালে জন্ম হয় ট্রাম্প-মেলানিয়ার একমাত্র সন্তান ব্যারন উইলিয়ামের।
অন্যান্য প্রাক্তন মার্কিন ফার্স্ট লেডির তুলনায় স্বামীর সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে কমই দেখা গিয়েছিল মেলানিয়াকে। তবে জানিয়েছেন তিনি-ই স্বামীকে উৎসাহ দিয়েছেন রাজনীতিতে জীবনের নতুন পর্ব শুরু করার।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন ফার্স্ট লেডি হওয়ার পরেও মেলানিয়া থাকতেন ম্যানহাটনের ট্রাম্প টাওয়ারে। কারণ তাঁর ছেলে ব্যারনের স্কুলের শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে তিনি ঠিকানা বদলাতে চাননি। ছ’মাস পরে, সে বছরের জুন থেকে তিনি বসবাস শুরু করেন হোয়াইট হাউসে।
শরণার্থী সমস্যার বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছেন মেলানিয়া। ট্রাম্প প্রশাসনের জিরো টলারেন্স ইমিগ্রেশন পলিসির প্রেক্ষিতে মেলানিয়া বলেছেন, শরণার্থী শিশুদের তাদের মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়াকে তিনি সহ্য করতে পারেন না। তাই শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী ও সুষ্ঠু সমাধান প্রয়োজন।
‘ইন স্টাইল ম্যাগাজিন’, ‘নিউ ইয়র্ক’, ‘অ্যাভিনিউ’, ‘ফিলাডেলফিয়া স্টাইল’, ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’, ‘ভোগ’-সহ নামী ফ্যাশন পত্রিকায় মডেলিং করেছেন মেলানিয়া। ছিল নিজস্ব অলঙ্কার ও প্রসাধনীর ব্যবসাও। তবে এখন তাঁর পরিচয় শুধুই ‘আমেরিকান ফার্স্ট লেডি’। তারপরেও সারা বিশ্বের কাছে তিনি অন্যতম ফ্যাশন আইকন।
ইংরেজির পাশাপাশি স্লোভেনিয়ান, সার্বো ক্রোয়েশিয়ান, ফরাসি এবং জার্মান ভাষায় স্বচ্ছন্দ মেলানিয়া। ট্রাম্পের আগের দু’টি বিয়ের সন্তানদের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ভাল। (ছবি: এপি, এএফপি, পিটিআই ও রয়টার্স)