ইমেল মারফত ভোটিংয়ে ব্যাপক কারচুপি হতে পারে বলে মনে করেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা-সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা। অন্য দিকে, প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমুখী। সংক্রমণ মোকাবিলায় ব্যর্থতার জেরেই যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় ভাটা, তা-ও জানিয়েছে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা। এই আবহে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর যুক্তি, করোনা-পরিস্থিতিতে পোস্টাল ব্যালট বা মেল-ইন ভোটিংয়ে ব্যাপক কারচুপি হতে পারে। যদিও ঠিক কোন যুক্তিতে এই মন্তব্য করেছেন, সে বিষয়ে নিশ্চুপ ট্রাম্প। ঘটনাচক্রে, আমেরিকার অর্থনীতির রেকর্ড সংকোচনের খবর প্রকাশের পরই ভোট পিছনোর প্রস্তাব আসে ট্রাম্পের কাছ থেকে।
বৃহস্পতিবার একের পর এক টুইটে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর কারণ হিসাবে একটি টুইটে তাঁর দাবি, “মেল-ইন ভোটিং (ভোটারদের অনুপস্থিতি নয়, সে তো ভাল)-এর ফলে ইতিহাসের সবচেয়ে ভুলে ভরা এবং প্রতারণার নির্বাচন হবে ২০২০-তে। এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত লজ্জার বিষয় হবে। যত দিন না মানুষ সঠিক ভাবে, সুরক্ষিত হয়ে নিরাপদে ভোট দিতে পারেন, তা পিছিয়ে দেওয়া হোক???”
আগামী ৩ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তবে সে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার ক্রমশ বাড়তে থাকায় বুথে গিয়ে গিয়ে মতদানের পরিবর্তে মেল-ইন ভোটিংয়ের ভাবনা-চিন্তা তীব্র হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভুটানেও এলাকা দাবি চিনের, ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে বেজিং, বলল আমেরিকা
ইতিমধ্যে সে দেশের বিভিন্ন স্টেটের প্রশাসন ঘোষণা করেছে, সংক্রমণের মোকাবিলায় ভোট হবে ইমেল মারফত। তবে ট্রাম্পের মত, তাতে ব্যাপক হারে কারচুপির সম্ভাবনা রয়েছে। ইমেলের মাধ্যমে ভোটিংয়ে যে ‘সর্বনাশা বিপর্যয়’ হবে, এমন মন্তব্যও করেছেন ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, “ইমেল মারফত ভোটিং একটি সর্বনাশা বিপর্যয় বলে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। এমনকি, এটি পরীক্ষা করার জায়গাও নেই। ডেমোক্র্যাটরা ভোটে বিদেশি প্রভাবের কথা বলে বেড়ান। তবে তাঁরা জানেন, ইমেল মারফত ভোটেই অন্য দেশগুলি সবচেয়ে সহজে দৌড়ে ঢুকে যেতে পারে। তা ছাড়া, এই ব্যবস্থায় তো গণনায় সঠিক চিত্র পাওয়া যায় না।”
আরও পড়ুন: গত সপ্তাহে আমেরিকার তিন কোটি মানুষের পর্যাপ্ত খাবার ছিল না, বলছে সমীক্ষা
তবে ঘটনাচক্রে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় ইতিহাসে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হার সবচেয়ে নীচে নেমে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই ট্রাম্পের তরফে এই প্রস্তাব এসেছে। ব্যুরো অব ইকনমিক অ্যানালিসিস-এর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সে দেশের অর্থনীতির সংকোচন ঘটেছে ৩২.৯ শতাংশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় অর্থনীতি এই প্রথম এতটা নিম্নমুখী। পাশাপাশি, আমেরিকায় করোনা সংক্রমিতের সংখ্যাও বাড়ছে লক্ষণীয় হারে। শুক্রবার ভারতীয় সময় অনুযায়ী সে দেশের সংক্রমিতের সংখ্যা ৪৫ লক্ষের দিকে এগোচ্ছে। মৃত্যু হয়েছে দেড় লক্ষেরও বেশি। দেশের করোনা-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্পের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হয়েছে অনেকে। অন্য দিকে, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের জনপ্রিয়তা ক্রমশই বাড়ছে। ফলে ট্রাম্পের ভোট পিছনোর প্রস্তাবের নেপথ্যে যে অন্য কারণও জড়িত, তা-ই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব সত্ত্বেও নির্বাচনী দিনক্ষণ ঘিরে অনিশ্চতা নেই বলেই মনে করছেন তারা। কারণ, প্রস্তাব সত্ত্বেও একমাত্র কংগ্রেসের অনুমোদন মিললে তবেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে। এই সংক্রান্ত আইনে বদল ঘটালে তবেই তা পিছোতে পারে। তবে মার্কিন কংগ্রেসে নিম্ন কক্ষে ট্রাম্প-বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এ নিয়ে আপাতত অনিশ্চয়তা নেই বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে এক ইতিহাসবিদ মাইকেল বেশলস বলেন, “প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চাল কখনই সফল হয়নি আমেরিকার ইতিহাসে, তা সে গৃহযুদ্ধের সময়ই হোক বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়।” হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ-এর জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান সাফ বলেছেন, “পরিষ্কার জানিয়ে রাখছি, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাই নেই ট্রাম্পের হাতে। সংবিধানেও বলা রয়েছে, নির্বাচনের দিন পিছনোর ক্ষমতা একমাত্র কংগ্রেসের কাছেই রয়েছে।”