ট্রাম্পের মুখে হাসি, পাশ আয়কর বিল

প্রচারেই দেশবাসীকে আয়কর নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়িত হতে চলেছে। আগের জমানার স্বাস্থ্য প্রকল্প ‘ওবামা কেয়ার’ খারিজ করা, রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত বন্ধ করা বা মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল তোলা— গত ১১ মাসে

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৫
Share:

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল তিক্র,

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ‘প্রথম বড় জয়ের’ স্বাদ পেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাটদের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও মঙ্গলবার মাঝরাতে মার্কিন সেনেটে পাশ হয়ে গেল আয়কর সংস্কার বিল। আয়কর ক্ষেত্রে গত তিরিশ বছরে এত বড় সংস্কার দেখেনি আমেরিকা। সেই ১৯৮৬ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগনের আমলে শেষ বারের মতো ঢেলে সাজা হয়েছিল দেশের আয়কর ব্যবস্থা।

Advertisement

প্রচারেই দেশবাসীকে আয়কর নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়িত হতে চলেছে। আগের জমানার স্বাস্থ্য প্রকল্প ‘ওবামা কেয়ার’ খারিজ করা, রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত বন্ধ করা বা মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল তোলা— গত ১১ মাসে কিছুতেই সাফল্যের মুখ দেখেননি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সে দিক থেকে এই আয়কর বিল তাঁর প্রথম ‘বড় সাফল্য’। ‘‘এটি ‘‘দেশবাসীকে আমার বড়দিনের উপহার,’’ মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

গত মাসেই হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে বিলটি পাশ হয়ে গিয়েছিল। ডেমোক্র্যাটরা আয়কর সংস্কারের বিপক্ষে ২০৩টি ভোট দিলেও ২২৭ জন রিপাবলিকান প্রতিনিধি সংস্কারে সায় দিয়েছিলেন। এর পর কাল সেনেটে পেশ করা হয় বিলটি। সেখানে ৪৮ জন ডেমোক্র্যাট বিলটির বিপক্ষে ভোট দিলেও ৫১ জন রিপাবলিকান সদস্যই ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দেন। অসুস্থতার জন্য শুধু অনুপস্থিত ছিলেন রিপাবলিকান সেনেটর জন ম্যাকেন। ভোটাভুটির পরে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ঘোষণা করেন, ‘‘আগামী ১ জানুয়ারি থেকে অন্য এক আমেরিকাকে দেখবেন দেশবাসী।’’

Advertisement

আজই বিলটি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ফিরে যাবে। কিন্তু সেখানে আরও এক বার সেটি পাশ করা শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে। হাউসে দ্বিতীয় বার বিল পাশ হয়ে গেলে সেটি সোজা যাবে প্রেসিডেন্টের টেবিলে। ট্রাম্প একবার তাতে সই করে দিলে আমেরিকার আয়কর জগতে শুরু হবে এক নতুন অধ্যায়। আর পুরো প্রক্রিয়াটাই করা হবে বড়দিনের ছুটি শুরুর আগে। যাতে বছরের প্রথম দিন থেকে নয়া ব্যবস্থা কার্যকর হতে পারে।

তবে রিপাবলিকানদের এই জয়ের রাস্তাটা মসৃণ ছিল না। নয়া আয়কর ব্যবস্থা মধ্যবিত্ত মার্কিনদের স্বার্থে আঘাত হানবে এই দাবি করে প্রথম থেকেই বিলের বিরোধিতা করে আসছেন ডেমোক্র্যাটরা। নতুন আয়কর আইনে উচ্চবিত্ত, শিল্পপতিদের এবং কর্পোরেট সংস্থাদের বিপুল ছাড় দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। তুলনায় মধ্যবিত্তরা সুযোগ-সুবিধে অনেক কম পাবেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের। কিন্তু রিপাবলিকানদের যুক্তি, দেশের বৃদ্ধি আর উন্নয়নের জন্য এমন সংস্কার জরুরি। কারণ কর্পোরেটদের ছাড় দিলেই বিনিয়োগের রাস্তা খুলবে। আরও কর্মসংস্থান হবে। তাই নতুন আইনে তাদের কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২১ শতাংশ করা হয়েছে।

আগে কয়েক জন রিপাবলিকানও এই বিলের বিরোধিতা করেছিলেন। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে বিল পেশ হওয়ার সময়ে ১১ জন রিপাবলিকান বিলের বিপক্ষে ভোট দেন। তাঁদের মধ্যে নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া আর নিউ জার্সির মতো এলাকার প্রতিনিধিরা ছিলেন। লিওনার্ড লান্স নামে নিউ জার্সির রিপাবলিকান প্রতিনিধি বলেছিলেন, ‘‘প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবিত বিলে নিউ জার্সির মতো মধ্যবিত্ত এলাকার মানুষদের জন্য কর ছাড়ের সুযোগই থাকছে না। ’’

মধ্যবিত্ত স্বার্থের কথা তুলে ধরে এই বিলে এত দিন প্রবল আপত্তি জানিয়ে এসেছেন ডেমোক্র্যাটরা। কিন্তু রিপাবলিকানদের দাবি, নতুন আইনের আওতায় দেশের প্রতিটি করদাতারই গড়ে ২ শতাংশ কর মকুব হবে। ফলে এটিকে মধ্যবিত্ত স্বার্থ-বিরোধী বলা যাবে না। মাইক পেন্সের কথায়, ‘‘একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের বছরে দু’হাজার ডলার কম আয়কর দিতে হবে।’’ কিন্তু এক আয়কর বিশেষজ্ঞের ব্যাখ্যা, একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের যা গড় আয়, তাতে নতুন কর ব্যবস্থায় বছরে ৯০০ ডলারের বেশি ছাড় পাবে না তারা।

সেনেটে বিলটি পেশ হওয়ার সময় দর্শকাসন থেকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অনেকে। ‘‘কিল দ্য বিল, নট আস (বিলটিকে ধ্বংস করুন, আমাদের নয়)’’, বলে চিৎকার করছিলেন এক মহিলা। নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে সরিয়ে দেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement