ট্রাম্প ও দিদি মেরিঅ্যান।
তাঁর বিরোধীদের কণ্ঠে এমন ‘অভিযোগ’ প্রায়শই শোনা যায়। তাতে অবশ্য কোনও দিনই খুব একটা গুরুত্ব দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এ বার তাঁকে ‘নীতিজ্ঞান শূন্য’ এবং ‘নিষ্ঠুর’ বলে বিঁধলেন তাঁর নিজের দিদি! যদিও প্রকাশ্যে নয়। গোপনেই। প্রেসিডেন্টের ভাইঝি মেরি ট্রাম্পের কাছে এই কথাগুলি বলেছিলেন ৮৩ বছর বয়সি মেরিঅ্যান ট্রাম্প ব্যারি। ট্রাম্পের তরফে যদিও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর সহোদরার এই রেকর্ডিং ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ট্রাম্পের ভাইঝি মেরি শনিবার জানান, ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রেসিডেন্টের বিষয়ে তাঁর দিদি মেরিঅ্যানের ওই মন্তব্যগুলি রেকর্ড করেছিলেন তিনি। মখোমুখি রেকর্ড করা প্রায় পনেরো ঘণ্টার রেকর্ডিং রয়েছে তাঁর কাছে, দাবি ট্রাম্পের ভাইঝির। ‘টু মাচ অ্যান্ড নেভার ইনাফ: হাউ মাই ফ্যামিলি ক্রিয়েটেড দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ডেনজারাস ম্যান’— সম্প্রতি এই বইটি লিখে শিরোনামে এসেছিলেন মেরি। ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বইটিতে একাধিক গুরুতর অভিযোগ এনেছেন মেরি। তারই রেশ পাওয়া গেল প্রাক্তন ফেডারেল বিচারক মেরিঅ্যানের রেকর্ডিংগুলিতেও।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প কেমন? সে প্রসঙ্গে একটি রেকর্ডিংয়ে ট্রাম্পের ‘মিথ্যে বলার অভ্যেসকেই’ কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মেরিঅ্যান। প্রকাশ্যে এর আগে কখনও ভাইয়ের বিরুদ্ধে এ ভাবে মুখ খোলেননি মেরিঅ্যান। যদিও ৮০-র দশক থেকেই তাঁদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল বলে দাবি পারিবারিক সূত্রের। যা রেকর্ডিংয়ে কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন ট্রাম্পের দিদি। ট্রাম্প বারবার তাঁর সাফল্যের কৃতিত্ব নিতে চেয়েছেন বলে দাবি মেরিঅ্যানের। এই বক্তব্যের মাঝেই মেরিঅ্যানকে বলতে শোনা যায়, ‘ডোনাল্ড নিষ্ঠুর!’
এমনকি ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভ্যানিয়ায় প্রবেশের আগে ‘স্যাট’ পরীক্ষাটি ট্রাম্পের জায়গায় অন্য একজন দিয়েছিলেন! ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর রেকর্ড করা একটি অডিয়োয় এই বিস্ফোরক দাবি করেছেন মেরিঅ্যান। টাকার জোরেই নাকি ট্রাম্প সেই ব্যবস্থা করিয়েছিলেন, দাবি তাঁর। ট্রাম্পের জায়গায় জো শাপিরো নামে এক জন ওই পরীক্ষাটি দিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি। এই ঘটনার উল্লেখ মেরির বইতেও রয়েছে। প্রসঙ্গটি নিয়ে ওই বই প্রকাশের আগেও বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। জুলাইয়ে যদিও ওই অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যে’ এবং ‘ভুয়ো’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয় হোয়াইট হাউসের তরফে। তা অস্বীকার করেছে জো-র পরিবারও।
তবে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেখানে প্রার্থীর ‘চরিত্র’ এবং ‘নীতি’ই প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার, সেখানে ট্রাম্পের নিজের দিদির করা প্রত্যেকটি মন্তব্যের মাসুল দিতে হতে পারে ট্রাম্পকে, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। ট্রাম্পের কাছে যদিও ঘুরে দাঁড়ানোর পাল্টা সুযোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে ‘রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশন’। সামনের সপ্তাহে ওই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ট্রাম্পের ছেলেমেয়েরা কী বলেন, সে দিকেই নজর সকলের।
অন্য দিকে, মেরির এ ভাবে গোপনে কথোপকথন রেকর্ড করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। সেই প্রসঙ্গে শনিবার মেরির মুখপাত্র ক্রিস বাস্টার্ডি জানান, উত্তরাধিকার সূত্রে পারিবারিক সম্পত্তি বণ্টনের সময়ে মেরিকে ঠকিয়েছে তাঁর পরিবার। আগে একাধিক বার পরিবারের বলা মিথ্যের জেরে সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। ফলে ভবিষ্যতে নিজেকে বাঁচাতেই নাকি ২০১৮ সালে কথোপকথনগুলি রেকর্ড করতে শুরু করেন তিনি।