ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল চিত্র।
কাশ্মীর নিয়ে গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতাও করতে চেয়েছেন একাধিক বার। এ বার তাঁর নজরে লাদাখ। দিন তিনেক আগে বলেছিলেন, ভারত-চিনের মধ্যস্থতায় আগ্রহী নয় ওয়াশিংটন। কাল আবার ওকলাহোমায় নিজের ভোট-প্রচারে বেরোনোর আগে হোয়াইট হাউস থেকে সাংবাদিকদের বললেন, ‘‘খুব কঠিন সময় চলছে। মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে দু’পক্ষ। ভারতের সঙ্গে কথা হয়েছে। চিনের সঙ্গেও বলছি। দেখছি কী করা যায়! আমরা ওদের সব রকম ভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত।’’
ইঙ্গিত স্পষ্ট, ভারত-চিনের মধ্যে মধ্যস্থতায় আগ্রহী ট্রাম্প। সেই চিন, নভেম্বরের ভোটে জিততে তিনি যে দেশের প্রেসিডেন্টের শরণ নিয়েছেন বলে সম্প্রতি তোপ দেগেছেন ট্রাম্পেরই প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন। আগ বাড়িয়ে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব চিন চাইছে কি না, স্পষ্ট নয়। ভারত কিন্তু এখনও তার ঘোষিত অবস্থানেই— দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ অবাঞ্ছিত। কোনও দেশের সঙ্গে সত্যিই তেমন সঙ্কট তৈরি হলে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে তা মিটিয়ে ফেলাই দিল্লির নীতি।
পাকিস্তানের সঙ্গে টানাপড়েন নিয়ে একই অবস্থান ছিল ভারতের। গত বছর সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পকে পাশে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাষ্ট্রপুঞ্জের বার্ষিক অধিবেশনের মঞ্চে জানিয়ে দিয়েছিলেন, কাশ্মীর নিয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষকে ‘বিব্রত’ করতে চায় না ভারত। তবে ট্রাম্প যে লাদাখের উপর গোড়া থেকেই নজর রাখছেন, গত সপ্তাহে তা জানিয়েছিল হোয়াইট হাউস। ২ জুন এ নিয়ে মোদী-ট্রাম্পের কথা হয়েছিল বলেও দাবি তাদের।
আরও পড়ুন: ‘সতর্কবার্তা ছিল, মানেনি কেন্দ্রই’
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে লাল ফৌজের গেড়ে বসা নিয়ে মে থেকেই বাদানুবাদ চলছে দিল্লি-বেজিংয়ের। সম্প্রতি যা চরমে ওঠে এবং গত সোমবার দু’পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ হারান ২০ জন ভারতীয় সেন। চিনের তরফেও হতাহতের খবর মেলে। নতুন করে তিক্ততা বাড়ে চিন-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে।
এরই মধ্যে আবার বল্টনের প্রকাশিতব্য বই-বোমা থেকে জানা যায়, ট্রাম্প নাকি গত জি-২০ সম্মেলন থেকেই চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের কাছে হোয়াইট হাউসের ক্ষমতা ধরে রাখা নিয়ে দরবার করে আসছেন। তাই এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিল্লির একাংশ যথেষ্ট সন্দেহের চোখেই দেখছেন।
হোয়াইট হাউস যদিও বল্টনের ওই দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। এ দিকে, করোনার বাড়াবাড়ি থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক লাদাখ পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন প্রকাশ্যে চিনকে বিঁধেই চলেছে। ওয়াশিংটনের দাবি, লাদাখে সংঘর্ষের জন্য দায়ী চিনের জমি-দখলের নীতিই। চিনকে সরাসরি ‘দুর্বৃত্ত’ বলে উল্লেখ করে মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো শুক্রবার ‘২০২০ কোপেনহাগেন ডেমোক্র্যাসি সামিটে’ বলেন, ‘‘পিপল্স লিবারেশন আর্মিই পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া বাধিয়েছে ভারতের সঙ্গে। দক্ষিণ চিন সাগরের মতো ভারতীয় ভূখণ্ডেও জবরদখল চালিয়ে যাচ্ছে বেজিং।’’