জাতীয় পতাকার রং মাখা ট্রাম্পের অনুগামী।
গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রায় দু’মাস আগে (১৭ অগস্ট) আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, কারচুপি না-হলে তিনি হারতেই পারেন না। ভোটের দিন ভোর-রাত তিনটে নাগাদ হঠাৎই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলে বসলেন, উপচে পড়েছে তাঁর ভোট ভান্ডার। তিনি নাকি জিতেই গিয়েছেন। তার পর গণনা এগোতে দেখা গেল, জো বাইডেনের কাছে হেরে গিয়েছেন তিনি।
যদিও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সেই হার তিনি কিছুতেই মানতে চাননি। টুইট করে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা হারতেই পারি না। নানা রকম হিসেব করে দেখেছি, এই ভোটের ফল একটা বড় ধাপ্পা।’ আজ সকাল পর্যন্ত ভোটের ফলাফলের বিরুদ্ধে আইনজীবী রুডি গিলিয়ানিকে দিয়ে ৬২টি মামলা করিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে দু’টি মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। প্রমাণের অভাবে ৬১টি মামলা খারিজ করেছেন বিচারকেরা। ৬২তম মামলায় বিচারক বলেছেন, পেনসিলভেনিয়ার কোনও নাগরিক যদি তাঁর ভোট পাল্টাতে চান, তাঁকে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে প্রথমে।
তবে কোর্টে হেরে গিয়েও ভোটের ফল মানতে নারাজ তিনি। এর পরেও নানা প্রদেশের গভর্নরদের ধমক দিয়ে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে বলেছেন তিনি। বিভিন্ন প্রদেশে ভোট পুনর্গণনাও করিয়েছেন। তাতেও যখন ভোটের ফল পাল্টানো গেল না, চাপ বাড়াতে শুরু করলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের উপরে। বৃহস্পতিবার আমেরিকার কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছেন পেন্স। জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শংসাপত্র দেওয়ার কথা এই অধিবেশনেই। ট্রাম্পের দাবি ছিল, পেন্স যেন ট্রাম্পকেই বিজয়ী ঘোষণা করেন।
এই সময়ের মধ্যে ট্রাম্প একটা কাজ সেরে ফেলেছেন। তাঁর সমর্থকদের মাথায় একটি কাল্পনিক জগৎ সফল ভাবে গড়ে তুলেছেন। সেই মিথ্যে জগতের বিশ্বাস, বামপন্থী আর ফ্যাসিবাদ-বিরোধীরা হাজার হাজার ভোট কারচুপি করে জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে জিতিয়ে দিয়েছেন। সেখানে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক। তাঁরাই ভোট কারচুপি রুখে দিতে চান। এই কল্পনার জগতে কোভিড-১৯ একটি ধাপ্পা। কেউ মাস্ক পরলেই সে ডেমোক্র্যাট সদস্য। অদ্ভুত সব চিন্তাধারা! এই রিপাবলিকান সদস্যদের সাহায্য করেছে সোশ্যাল মিডিয়া আর সংবাদমাধ্যমের একাংশ।
আগামী ২০ জানুয়ারি বাইডেন-হ্যারিস জুটির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। এই পরিস্থিতিতে ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান দু’দলের সমর্থকদের চিন্তা একটাই। আগামী দু’সপ্তাহ ট্রাম্প মানসিক ভারসাম্য না-হারিয়ে ফেলেন!
ভেবে দেখুন, এই ডোনাল্ড ট্রাম্পই গত কাল জর্জিয়ার রিপাবলিকান প্রশাসনকে ‘স্কাউন্ড্রেল’ বলে গালিগালাজ করেছেন। কারণ নির্বাচনে হেরে গিয়েছেন জর্জিয়ার রিপাবলিকান প্রার্থীরা। আরও ভেবে দেখুন, এ দিন যদি ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার’ আন্দোলনকারীরা ক্যাপিটলের কাছাকাছি এই ধরনের জমায়েত করতেন, তা হলে বন্দুকধারী জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী নামাতে ট্রাম্প কত ক্ষণ সময় নিতেন?