ফিনিক্সে একটি মাস্ক উৎপাদনকারী সংস্থা পরিদর্শনে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি- এএফপি
করোনা কার্যত তাণ্ডব শুরু করেছে আমেরিকায়। রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। অন্য দিকে, চাপ বাড়াচ্ছে লকডাউনের জেরে থমকে থাকা অর্থনীতিও। ভয়াবহ এই পরিস্থিতির মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিলেন, আমেরিকা যুদ্ধের পরবর্তী ধাপে পৌঁছেছে। কী সেই ধাপ? করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লাভ-ক্ষতির নয়া সমীকরণ তুলে ধরেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে, এই আশঙ্কা মেনে নিয়েই এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়ে দিলেন, খুব শীঘ্রই দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হতে চলেছে। যদিও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পদক্ষেপ বড়সড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
মঙ্গলবার অ্যারিজোনার ফিনিক্সে সংবাদমাধ্যম এবিসি-কে সাক্ষাৎকার দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেখানে দেশের থমকে থাকা অর্থনীতির প্রসঙ্গ উঠে আসে। এবিসির তরফে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, ‘‘আপনি কী মনে করেন, দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হলে আরও মানুষের মৃত্যু হবে?’’ এর জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘‘সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ সে ক্ষেত্রে আপনি অ্যাপার্টমেন্ট, বাড়ি বা অন্যত্র আটকে থাকতে পারবেন না। বেরোতে হবে। এর পাশাপাশি আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার অভ্যাস করছি। আমরা হাত ধুচ্ছি। আমরা এমন সব বিভিন্ন জিনিস এই সময়টার মধ্যে শিখেছি।’’
মঙ্গলবার অ্যারিজোনায় একটি মাস্ক উৎপাদনকারী সংস্থায় পরিদর্শনে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানেও ট্রাম্প মেনে নেন, দেশে অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করলে কিছু মানুষ ‘দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হবেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশ এ বার খুলতে হবে এবং তা তাড়াতাড়িই করতে হবে।’’ কিন্তু তিনি দেশের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করার পক্ষে সওয়াল করলেও আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যের গভর্নর তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আরও পড়ুন: রেমডেসিভির তৈরি হবে ভারতে? একাধিক সংস্থার সঙ্গে কথা চলছে, জানাল জিলিয়াড
দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করার পক্ষে একাধিক যুক্তি দিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি, সামাজিক দূরত্ব ও বিধি নিষেধ মেনে চলার জন্য অনেকে মানসিক অবসাদে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন এবং আত্মহত্যা করছেন। তিনি বলেন, ‘‘তাকিয়ে দেখুন চারপাশে কী হচ্ছে! মানুষ কাজ হারাচ্ছেন। আমাদের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং আমরা তা করছিও।’’ তাঁর মতে, ‘‘আমরা আগামী ৩ বছর ধরে ঘরে বসে থাকতে পারি না।’’
সামনে কঠিন লড়াই বলে আমেরিকাবাসীকে সতর্ক করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘‘করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকা পরবর্তী ধাপে পৌঁছে গিয়েছে।’’ মার্কিন নাগরিকদের নিজেদের ‘যোদ্ধা’ হিসাবে ভাবতেও বলেছেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে দৃঢ় ভাবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টিও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে কি ঝুঁকিতে পড়তে পারেন মার্কিন নাগরিকরা? ট্রাম্প যতই আশাবাদী হোন না কেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, টিকা বা উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এমন পদক্ষেপ বড়সড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ইতিমধ্যেই আমেরিকায় ১২ লক্ষের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৭১ হাজার মানুষের।
আরও পড়ুন: দ্রুত প্রতিষেধক উৎপাদনে যৌথ উদ্যোগ ব্রিটেনে
মঙ্গলবার অ্যারিজোনায় একটি মাস্ক উৎপাদনকারী সংস্থা পরিদর্শন বলেন ট্রাম্প। ‘হানিওয়েল ইন্টারন্যাশনাল’ নামে ওই কারখানায় ওই কারখানায় এন-৯৫ মাস্ক তৈরি হয়। মাস্ক পরার জন্য মার্কিন প্রশাসন নাগরিকদের পরামর্শ দিলেও, ওই দিন কারখানার ভিতরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর সঙ্গীদের মাস্ক পরে থাকতে দেখা যায়নি।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)