রামধনু রঙে দিল্লির মার্কিন দূতাবাস। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের খুব একটা মত নেই। তার পরেও জুন মাস জুড়ে বিভিন্ন দেশের মার্কিন দূতাবাসের বাইরে উড়ছে সাতরঙা পতাকা। উপলক্ষ ‘গে প্রাইড মান্থ’। সমকামী-রূপান্তরকামীদের প্রতি সম্মান জানানো। ব্যতিক্রম নয় ভারতও। চেন্নাইয়ের মার্কিন কনসুলেটে ঢোকার মুখেই বিরাট ‘রেনবো ফ্ল্যাগ’। নয়াদিল্লির দূতাবাস সেজেছে সাত রঙের আলোতে। চিলির মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইট খুললে দেখা যাচ্ছে একটি ভিডিয়ো। যেখানে রামধনু পতাকা তুলছেন এক শীর্ষ কূটনীতিক। ভিয়েনায় মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটেও ‘রেনবো ফ্ল্যাগ’। জেরুজালেমে মার্কিন কূটনীতিকরা আবার সমকামী মিছিলে অংশ নেওয়ার ছবি পোস্ট করেছেন টুইটারে। ‘প্রাইড’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দূতাবাসের বাইরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন তাঁরা।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে জুন মাসে সারা বিশ্ব জুড়ে মার্কিন দূতাবাসগুলিতে ‘প্রাইড মান্থ’ পালনের ঢালাও অনুমতি দেওয়া ছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশ, ‘রেনবো ফ্ল্যাগ’ লাগাতে হলে আগে বিদেশ দফতরের শীর্ষ কর্তাদের অনুমতি নিতে হবে। এই অনুমতি আদায় করতেই বিপত্তি। চলতি বছর যে যে দেশের দূতাবাস অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল, তার একটিও মঞ্জুর হয়নি বলে জানা গিয়েছে। যদিও বিদেশ দফতরের একাংশ জানিয়েছে, দূতাবাসের প্রধান পতাকা লাগানোর যে জায়গা, সেখানে ‘রেনবো ফ্ল্যাগ’ লাগানোয় আপত্তি করা হয়েছে। অন্যত্র পতাকা লাগানো যেতে পারে। যদিও সরকারি ভাবে বিবৃতি দিয়ে এ বারও ‘এলজিবিটি প্রাইড মান্থ’ পালনের কথা বলেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
‘প্রাইড মান্থ’ পালনের কিছু নিয়মনীতি ওবামার আমলেও ছিল। বলা হয়েছিল, রামধনুরঙা পতাকা আমেরিকার পতাকার তুলনায় মাপে ছোট হবে ও তা মার্কিন পতাকার উপরে উড়তে পারবে না। কিন্তু অনুমতি নিয়ে কড়াকড়ির বালাই ছিল না তখন। রাষ্ট্রদূতের হাতেই ছিল অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা ছিল। গত বছর থেকেই বদলে যায় গোটা ছবিটা। বিশেষত মাইক পম্পেয়ো বিদেশসচিব হওয়ার পর থেকে। সে বছর থেকে জারি হওয়া নয়া নির্দেশিকায় বলে দেওয়া হয়, ‘রেনবো ফ্ল্যাগ’ লাগাতে হলে বিদেশ দফতরের উপরমহলের অনুমতি আবশ্যিক। দফতরের তরফে সরাসরি এ নিয়ে কোনও কথা বলা না হলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কূটনীতিক জানিয়েছেন, গত বছর ‘রামধনু পতাকা’ তোলা নিয়ে কোনও আপত্তি করা হয়নি। কিন্তু চলতি বছরে ইজ়রায়েল, জার্মানি, ব্রাজিল ও লাতভিয়ার মার্কিন দূতাবাসের তরফে আবেদন করা হয়েছিল। প্রতিটি আবেদন বাতিল হয়ে গিয়েছে। এলজিবিটি সম্প্রদায়ের কূটনীতিকদের কেউ কেউ মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ হিমশৈলের চূড়ামাত্র। ট্রাম্পের দাবি, তিনি নিজে সমকামী অধিকার নিয়ে সোচ্চার। অথচ তাঁর প্রশাসনের নীতিই বলছে অন্য গল্প।।
পদে আসার পরে ট্রাম্প নিজে একাধিক সমকামী রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেছেন। ট্রাম্পই প্রথম রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট যিনি নিজে সমকামিতাকে অপরাধের আওতার বাইরে বার করার জন্য বিশ্ব জুড়ে প্রচারের ডাক দিয়েছেন। অথচ এই ট্রাম্পই আবার সেনাবাহিনীতে সমকামীদের নিষিদ্ধ করার পক্ষে সওয়াল করেছেন। এখানেই ভয় কারও কারও। এক সমকামী কূটনীতিক বলেন, ‘‘আমরা রেডারের নীচে রয়েছি। আমরা পার পেয়ে গিয়েছি কারণ আমাদের সমকামিতার কথা ওরা জানে না।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।