Dilip Kumar

Dilip Kumar Death: ‘প্রথম খান’-এর শোকে উদ্বেল, পাকিস্তান ভুলবে না ইউসুফকে

১৯৩৫ সালে মুম্বই পাড়ি দেওয়ার পরেও দিলীপ পাকিস্তানকে ভোলেননি কখনও। বরং নিজের পাকিস্তানি শিকড় নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত ছিলেন।

Advertisement

খুশনুর আনোয়ার

করাচি শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২১ ০৫:৩৬
Share:

ইমরান খানের সঙ্গে লন্ডনে। তখন ইমরানের ক্যানসার হাসপাতালের জন্য টাকা তোলায় সাহায্য করছেন দিলীপ কুমার। ফাইল চিত্র

পেশোয়ারের কিসসা খোয়ানি বাজার থেকে উদয়। অবশেষে ভারতের মুম্বইয়ে সূর্যাস্ত। দিলীপকুমারের প্রয়াণ শুধু ভারত নয়, পাকিস্তানকেও শোকে নিমজ্জিত করেছে। অনেকগুলি প্রজন্মের জন্য তাঁর কাজের উত্তরাধিকার রেখে গেলেন তিনি। ওঁর অভিনয়ের দ্যুতি কোনও সীমান্ত মানেনি, তিনি নিজেও নিজেকে সীমান্তে আবদ্ধ রাখেননি।

Advertisement

১৯৩৫ সালে মুম্বই পাড়ি দেওয়ার পরেও দিলীপ পাকিস্তানকে ভোলেননি কখনও। বরং নিজের পাকিস্তানি শিকড় নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত ছিলেন। অনেক বার এখানে এসেছেন এবং যখনই এসেছেন তুমুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনায় তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। পেশোয়ারে তাঁর সম্মানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এক বার পঞ্জাবি আর পশতু ভাষায় কথা বলে দর্শকের মন জয় করে নিয়েছিলেন। কিসসা খোয়ানি বাজারে ওঁদের পুরনো বাড়িটিকে জাতীয় হেরিটেজ ঘোষণা করা হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের আমলে। দিলীপ নিজে তাঁর স্মৃতিচারণে বলেছিলেন, এই বাজারেই এক জন গল্প-বলিয়ে আসতেন নিয়মিত। ছোটবেলায় সেই গল্প শোনার জন্য হাঁ করে বসে থাকতেন তিনি। আর বসে থাকতেন মায়ের অপেক্ষায়। বাড়ির সব কাজ সেরে কখন মা একটু ফুরসত নিয়ে বসবেন, ছোট্ট ইউসুফ পাশে বসে মায়ের সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে!

সস্ত্রীক পারভেজ মুশারফের সঙ্গে দিলীপ কুমার ও সায়রা বানু। ফাইল চিত্র

পাকিস্তান দিলীপকে তার সর্বোচ্চ সম্মান নিশান-ই-ইমতিয়াজে ভূষিত করেছে। আজ ওঁর মৃত্যুসংবাদে শোক যেন বাঁধ মানছে না পাকিস্তানে। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, দিলীপ শুধু এক অসামান্য অভিনেতাই নন, তিনি অত্যন্ত বিনয়ী এবং পরিশীলিত ব্যক্তিত্বের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আন্তরিক শোকবার্তায় নিখেছেন, তাঁর মা শৌকত খানুমের নামে ক্যানসার হাসপাতালের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজে দিলীপকুমার যে ভাবে পাকিস্তানে এবং লন্ডনের অনুষ্ঠানে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সে কথা তিনি কোনও দিন ভুলবেন না। দিলীপ তাঁর সময়কার সেরা অভিনেতা, বলেছেন ইমরান।

Advertisement

দিলীপও কিন্তু ইমরানকে পছন্দ করতেন খুব। একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ইমরান খুব সাহসী। ক্রিকেট থেকে হাসপাতাল, যে কাজেই হাত দিয়েছেন, সফল হয়েছেন। আজ শোক জানাননি কে? শাহিদ আফ্রিদি থেকে শুরু করে সেলেব্রিটিরা সকলেই প্রথম খানের জন্য উদ্বেল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ স্মরণ করছেন, দিলীপকুমারের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। দিলীপের ক্যারিশমা ওঁকে মুগ্ধ করেছিল। সবার প্রিয় ‘দেবদাস’ শুধু তো অভিনয়গুণেই সকলের মন কাড়েননি, হিন্দু-মুসলিম ঐক্য ও সম্প্রীতির প্রশ্নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী খুরশিদ মহম্মদ কাসুরি তাঁর বইয়ে লিখেছেন সে কথা— যখনই পাকিস্তানে এসেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য কাজ করেছেন গোপনে।

আজ করাচির নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে কথা বলেছি সাধারণ মানুষের সঙ্গে। অভিজাত এলাকা থেকে বস্তি, ধনী থেকে গরিব, বৃদ্ধ থেকে যুবক— সকলেরই এক প্রতিক্রিয়া। দিলীপকুমারের জন্য দুঃখ আর শোক। ছয় দশক ধরে মানুষের মনে রাজত্ব করে গিয়েছেন উনি, এখনও ম্লান হননি এতটুকু। ওঁর অভাব পূরণ হবে না কখনও। আমাদের হৃদয়ে ওঁর আসন চিরস্থায়ী।

(লেখক পাক সাংবাদিক)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement