সতর্ক: মাস্ক ও গ্লাভস পরেই ইদের নমাজ। রবিবার রোমের পিয়াৎজ়া ভিত্তোরিয়ো স্কোয়্যারে। এপি
ইদের ছুটিতে সাগরদ্বীপের বাড়িতে ফিরে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করবেন ভেবেছিলেন শেখ আব্দুল হালিম। সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে পাড়া বেড়াবেন, এই ভেবে দিন গুনছিলেন আবু ধাবিতে। কিন্তু লকডাউনের ধাক্কায় তিনি বিদেশেই বন্দি। ঘূর্ণিঝড় আমপান এসে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে সাগরদ্বীপ। তার পর থেকে স্ত্রী-কন্যা-পরিবারের কোনও খোঁজ পাচ্ছেন না তিনি।
মঙ্গলবার রাতে পরিবারের সঙ্গে শেষ বার কথা বলতে পেরেছিলেন শারজার বাসিন্দা রমাপদ মাইতি। সাগরদ্বীপের রাধাকৃষ্ণপুরে থাকা স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘‘সাবধানে থেকো। খাবার জোগাড় করে রেখো।’’ তার পর থেকে আর কোনও খবর নেই ছ’বছরের ছেলে, স্ত্রী-বাবা-মায়ের। দুবাই থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘এক বন্ধুর কাছে শুনেছি ঘরবাড়ি সব ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে। বাড়ির লোকের খবর কিছু জানি না।’’
সাগরদ্বীপ বা সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অনেকেই আরব দেশগুলিতে কাজ করতে যান। লকডাউনে আটকে থাকা শ্রমিকদের অনেকেই জানেন না, গ্রামের বাড়ির পরিস্থিতি ঠিক কী? রমাপদরা টিভিতে চোখ রেখে দিন গুনছেন।
হালিম জানান, লকডাউনে কাজ নেই, হাতের টাকাও দ্রুত ফুরোচ্ছে। লকডাউন কাটলে কাজ থাকবে কি না তা-ও জানেন না। তাই দেশে ফিরতে চান। কিন্তু ফিরবেন কী ভাবে? সেই উপায় খুঁজতে নিত্যদিন ভারতীয় দূতাবাসের দুয়ারে মাথা ঠুকছেন। কিন্তু দূতাবাস তেমন কোনও সাহায্য করেনি। বলেছে, কলকাতায় ফেরার কোনও উড়ান নেই। বিদেশে বসে নবান্নে ফোন করেছেন। তাতেও সাড়া মেলেনি। কলকাতার কারও ফোন পেলেই কেঁদে ফেলছেন মানুষগুলো। বলছেন, ‘‘হাতজোড় করে সরকারকে বলছি, আমাদের ফিরিয়ে নিন। এখানে পড়ে থাকলে আমরা বাঁচব কি না জানি না। তার উপরে দুর্যোগ সয়ে পরিবার কেমন আছে সেটুকু খবরও পাচ্ছি না।’’
বিদেশে থাকা মানুষগুলো এই বিপদের দিনে পরিবারের কাছে ফেরার জন্য যতটা ব্যাকুল, হয়তো আমপান-বিধ্বস্ত সাগরের কোনও ত্রাণশিবিরে বসে একই ভাবে তাঁদের পথ চেয়ে আকুল স্ত্রী-সন্তানেরা।
আরও পড়ুন: চিনের জাতীয় নিরাপত্তা আইন ঘিরে ফের উত্তাল হংকং, বিক্ষোভ লকডাউন ভেঙেই