coronavirus

COVID: করোনার দাপট, লকডাউনে ভেঙে পড়ার মুখে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি, জানাল গবেষণা

জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে করা ব্লুমবার্গের বিশেষজ্ঞদের একটি বিশ্লেষণ এই খবর দিয়েছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২১ ১৫:৫৮
Share:

-ফাইল ছবি।

সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের ডেল্টা রূপের দাপট। আর সার্বিক টিকাকরণ কর্মসূচির ব্যর্থতা। মূলত এই দুটি কারণেই গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি এখন ভেঙে পড়ার মুখে। এশিয়ার এই অঞ্চলের দেশগুলি যে অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে, তেমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। বরং দেশগুলির অর্থনীতি আরও বেহাল হওয়ারই আশঙ্কা রয়েছে। আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে করা ব্লুমবার্গের বিশেষজ্ঞদের একটি বিশ্লেষণ এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। দিনকয়েক আগে ইন্দোনেশিয়া কোভিডে দৈনিক মৃতের সংখ্যায় ভারতকে ছাপিয়ে গিয়ে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংক্রমণের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডেল্টা রূপের দ্রুত সংক্রমণ ক্ষমতা আর সকলকে দ্রুত কোভিড টিকা দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি অপদার্থতাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত এক সপ্তাহে ওই দেশগুলিতে কোভিডে মৃতের সংখ্যা ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। অতিমারির গত দেড় বছরে সংক্রমণ ও মৃতের হার বৃদ্ধির এমন ঘটনা বিশ্বের আর কোনও প্রান্তেই ঘটেনি। বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই পরিস্থিতিতেও এশিয়ার এই অঞ্চলের দেশগুলির মাত্র ৯ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। যা উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির টিকাকরণের হারের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। আমেরিকা ও ইউরোপের ওই সব দেশে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষকে ইতিমধ্যেই টিকা দেওয়া হয়েছে।

ছবিটা একটু আলাদা শুধু সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশেই একমাত্র টিকাকরণের হার বেশ উঁচুতে রয়েছে। তা ছাড়া বাইরের দেশ থেকে সংক্রমণে রাশ টানতে সিঙ্গাপুর অন্য সব দেশের সঙ্গে তার সীমান্ত এখনও বন্ধ করে রেখেছে।

Advertisement

করোনা মোকাবিলায় অর্থ বরাদ্দ করতে গিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশই এখন তীব্র রাজস্ব ঘাটতির মুখোমুখি। যে সমস্যা খুব শীঘ্র মেটারও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে গিয়ে আরও বেশি সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ছে দেশগুলি। তাদের মুদ্রা-মূল্য উত্তরোত্তর কমতে শুরু করেছে। চলতি অর্থবর্যে সবচেয়ে বেহাল অবস্থা তাইল্যান্ডের মুদ্রা বেহত-এর। এই মুদ্রার মূল্য জুনের মাঝামাঝি থেকে কমেছে পাঁচ শতাংশ। ফিলিপিন্সের মুদ্রা পেসো-র মূল্য হ্রাস পেয়েছে ৪.২ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অতিমারির আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মোট অর্থনীতি ছিল বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম। জার্মানির পরেই। আর এখন অতিমারির দাপটে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়া এ বছরে তাদের জিডিপি-র পূর্বাভাসের সীমা অনেকটাই কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছে। একই অবস্থা তাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স-সহ এই অঞ্চলের বহু দেশের। গত অর্থবর্ষে উঠে দাঁড়ালেও ভিয়েতনামের অবস্থাও অতিমারি পরিস্থিতিতে তথৈবচ।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই সমস্যা থেকে খুব শীঘ্র বেরিয়ে আসার কোনও আলো দেখা যাচ্ছে না। কারণ, আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলিতে মূলত ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের রফতানিই ছিল এই দেশগুলির অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কিন্তু লকডাউনে সেই সব শিল্প, কারখানা দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় সেই সব পণ্য রফতানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে।

বিশেষজ্ঞদের কথায়, “শুধু একটানা লকডাউন চালিয়ে গেলে কাজ হবে না। বরং টিকাকরণের কাজের গতি অনেক গুণ বাড়াতে হবে। না হলে সংক্রমণে তো রাশ টানা যাবেই না, অর্থনীতিও আরও মুখ থুবড়ে পড়বে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement