India- Bangladesh

আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কথা তুলে ঢাকাকে চাপ দিল্লির

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একটি বার্তা পাঠিয়েছেন ইউনূসকে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে। কয়েক লাইনের সেই বার্তায় তিনি একাধিক বার ‘নিরাপত্তার’ প্রসঙ্গ তুলেছেন।

Advertisement

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫ ০৯:৫৭
Share:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে ‘মুক্তিযুদ্ধের’ কথা স্মরণ করিয়ে ঢাকাকে বার্তা দিয়েছেন মোদী।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে ‘মুক্তিযুদ্ধের’ কথা স্মরণ করিয়ে ঢাকাকে বার্তা দিয়েছেন মোদী। —প্রতীকী চিত্র।

পার্শ্ববৈঠক হোক বা না হোক, আগামী মাসের গোড়াতেই তাইল্যান্ডের বিমস্টেক সম্মেলনে মুখোমুখি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তার আগে সে দেশের স্বাধীনতা দিবসে ‘মুক্তিযুদ্ধের’ কথা স্মরণ করিয়ে ঢাকাকে বার্তা দিয়েছেন মোদী। পাশাপাশি নয়াদিল্লি, গত রাতে জেনিভায় আয়োজিত রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলের পঞ্চান্নতম পার্শ্বসম্মেলনের কথা তুলে ধরতে চাইছে, যার বিষয় ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ইসলামি চরমপন্থার উত্থান।’ রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবকে এই একই বিষয়ে লেখা একটি চিঠিও সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক হিংসা এবং বর্তমান মৌলবাদের বাড়বাড়ন্ত’ নিয়ে সেই চিঠি লিখেছেন ইউরোপের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার শীর্ষ কর্তা এবং প্রাক্তন এমপি-রা।

Advertisement

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একটি বার্তা পাঠিয়েছেন ইউনূসকে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে। কয়েক লাইনের সেই বার্তায় তিনি একাধিক বার ‘নিরাপত্তার’ প্রসঙ্গ তুলেছেন। ট্রাম্পের বক্তব্য, “বাংলাদেশের এই পরিবর্তনশীল সময়ে দেশবাসীর কাছে সুযোগ এসেছে গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং নিরাপত্তাকে জোরদার করার।” পাশাপাশি তিনি জানান, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা বাড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী আমেরিকা।

কূটনৈতিক সূত্রের খবর, নেদারল্যান্ডস-এর প্রাক্তন এমপি হ্যারি ভ্যান বোমেল, ব্রিটেনের মানবাধিকার কর্মী ক্রিস ব্র্যাকবার্ন, ব্রাসেলস-এর পাওলো কাসাকা (সাউথ এশিয়া ডেমোক্র্যাটিক ফোরাম-এর অধিকর্তা) প্রমুখ রাষ্ট্রপুঞ্জকে লেখা চিঠিতে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ইউরোপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া। ইউনূস সরকারের পরোক্ষ মদতে ইসলামি চরমপন্থী জনতা যে ভাবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক হিংসা ঘটিয়েছে, আমরা ইউরোপের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে তার চরম নিন্দা করছি।’ ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবর রহমানের বাড়ি আক্রমণের প্রবল নিন্দা করে সরাসরি বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মধ্যে যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তারা ইউনূস সরকারের ঘনিষ্ঠ। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে এবং অদূর ভবিষ্যতে আরও বড় অস্থিরতা তৈরি হতে পারে এই আশঙ্কায়, মানবাধিকার কর্তারা রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং ইইউ-এর কাছে ছ’দফা দাবি পেশ করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে ২০২৫-এর ফেব্রুয়ারি মাসের হিংসায় ইন্ধনদাতাদের শাস্তি, হিন্দু-সহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দমনপীড়নের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যবস্থা গ্রহণ, চরমপন্থী ইসলামি সংগঠনগুলির উত্থান বন্ধ করতে পদক্ষেপ করার আর্জি।

Advertisement

মানবাধিকার কাউন্সিলের পার্শ্ববৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন ব্রিটেনের প্রাক্তন এমপি পল ব্রিস্টো-সহ বিভিন্ন দেশের আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মীরা। আলোচনার শেষে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে— ‘রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংস্থা, জো বাইডেন-এর আমেরিকা প্রশাসন এবং এখনও ইউনূসকে সহায়তা দিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব আসলে দেশটিকে আরও বড় ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, বিমস্টেক বৈঠকের আগে চরমপন্থী ইসলামি সংগঠনগুলির বাড়বাড়ন্ত বন্ধ করা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ঢাকার মাটিতে পাকিস্তানের আইএসআই-এর ভারত-বিরোধী প্রভাব কমাতে ইউনূস সরকারের উপর চাপ বাড়াতে চাইছে নয়াদিল্লি। ইউরোপের প্রভাবশালী অংশও যে বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংস্থার কাছে পৌঁছচ্ছে, এই বার্তাটি সেই কারণেই প্রকাশ্যে আনার কূটনৈতিক প্রয়োজন রয়েছে মোদী সরকারের। এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সে দেশের বর্তমান সরকারে উদাসীনতার দিকটি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা আর প্রচ্ছন্ন নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement