—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ বরাবরই গোটা দেশের সামনে সম্প্রীতির নানা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। একবার নয়, বহুবার। এ রাজ্যেরই কবি নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-সহ অনেকেই সম্প্রীতি নিয়ে নানা কবিতা ও গান লিখেছেন। যা সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে আজও আমাদের মনে অমলিন। কিন্তু যতদিন গড়াচ্ছে, এ রাজ্যের রাজনীতিতে ধর্মীয়করণ হয়ে চলেছে। ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি কোনও ভাবেই মেলানো উচিত নয়। কারণ, রাজনীতি একটি নীতি ও আদর্শকে সামনে রেখে পরিচালিত হয়। ধর্ম হল মানুষের বিশ্বাস ও আবেগ। এখনকার দিনের রাজনীতি দেখে মনে হচ্ছে, একেকটি রাজনৈতিক দল যেন একেকটি ধর্মকে সমর্থন করছে। এটা কখনও ঠিক নয়। কারণ, রাজনীতি একটি বড় জায়গা। সেখানে নির্দিষ্ট কোনও ধর্মকে সমর্থন করা হলে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়।
রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কোনও ধর্মকেই ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে সম্প্রীতি নষ্ট হয়। মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ থেকে সমস্যা আরও বড় আকার নেয়। রাজ্য তথা দেশ জুড়ে খুশির ইদ পালিত হল। ইদে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রীরা সংখ্যালঘু মানুষজনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আবার কয়েকদিন পর রামনবমী। সেখানেও সব রাজনৈতিক দলের নেতা ও মন্ত্রীদের হিন্দুদের শুভেচ্ছা জানানো উচিত। শুধু ধর্মকে কেন্দ্র করে কোনও রাজনীতি যাতে পরিচালিত না হয়, তা সকলেরই দেখা উচিত।
আরেকটি বিষয় হল, বেশকিছু রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে উস্কানিমূলক মন্তব্য করছেন। এতে যেমন একটি ধর্মকে সমর্থন করা হচ্ছে, তেমনই অপর ধর্মকে অসম্মান করা হচ্ছে। এগুলি বন্ধ হওয়া দরকার। কারণ, স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের প্ররোচনার জেরেই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে গোলমাল ও ঝামেলা বাধে। তাতে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বিভেদ বা ঝামেলা হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার উন্নয়নও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতিতে ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা তাই কখনই মানা যায় না।
আমাদের রাজ্য তথা দেশ বরাবরই বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করে চলেছে বহু বছর ধরে। এই রীতি বজায় রাখতে হবে। হাসপাতালে যখন রোগীদের রক্ত দিয়ে বাঁচানো হয়, তখন সেই রক্ত কোনও ধর্মের মানুষের, তা কিন্তু কেউ বিচার করেন না। তাই, দেশ তথা রাজ্যের উন্নয়ন ও শান্তির স্বার্থে রাজনীতিতে ধর্মীয়করণ ও ধর্মীয় উস্কানি থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ধর্মের নামে সমাজে বিভেদ তৈরি করে কেউ যাতে কোনও রকম স্বার্থসিদ্ধি করতে না পারেন, সেই দিকে আমাদের সকলের নজর রাখতে হবে।
লেখক: উত্তর দিনাজপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের প্রাক্তন চিকিৎসক
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে