Donald Trump

শান্তির আহ্বানে মিশল কটাক্ষও

কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। হিংসার নিন্দা করেছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবের্তো ফার্নান্দেজ এবং চিলের প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:২৩
Share:

ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা।

দু’টি দৃশ্য। একটি ২০১৯ সালের। ওই সময়ে হংকংয়ের আইনসভায় ঢুকে পড়েছিলেন চিন-বিরোধী বিক্ষোভকারীরা। অন্যটি গত কালের, আমেরিকার কংগ্রেস ভবনে ট্রাম্প-সমর্থকদের হামলার। দুইয়ের মধ্যে যোগসূত্র টেনে এনে আমেরিকাকে তীব্র খোঁচা দিল চিনা কমিউনিস্ট পার্টির অধীনস্থ সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস। আজ তারা লিখেছে, ‘‘হংকংয়ের দাঙ্গার ঘটনাকে এক সময়ে ‘সুন্দর দৃশ্য’ বলেছিলেন হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। দেখা যাক, ক্যাপিটল হিলের সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে তিনি একই কথা বলেন কি না।’’

Advertisement

কেউ বলছেন, ‘অসম্মানজনক দৃশ্য’। শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথাও বলছেন অনেকে। আবার কেউ কটাক্ষের মেজাজে বলছেন, ‘‘আমেরিকার গণতন্ত্র খোঁড়াচ্ছে।’’ আমেরিকান কংগ্রেসে নজিরবিহীন হামলা নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতা ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্তাদের মুখে এমনই সব প্রতিক্রিয়া।

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বিদায়ী আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিজেই তাঁকে ‘ব্রিটেন ট্রাম্প’ বলেছিলেন। আজ জনসন টুইটারে লেখেন, ‘‘বিশ্বে আমেরিকা গণতন্ত্রের প্রতীক। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল ভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হওয়াটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ।’’ গত কালের হামলাকে ‘অসম্মানজনক’ বলেছেন তিনি। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি পটেল অবশ্য এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ট্রাম্পের মন্তব্যই তাঁর সমর্থকদের হামলা চালাতে ইন্ধন জুগিয়েছে। ব্রিটেনের বিরোধী দলনেতা কেয়ার স্টার্মারের মতে, এই ঘটনা সরাসরি গণতন্ত্রের উপরে আঘাত। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জনের টুইট, ‘‘ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতো ছবি।’’

Advertisement

আমেরিকার গত নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছিল। রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের বিদেশ মন্ত্রক বিষয়ক কমিটির চেয়ারপার্সন কনস্তানস্তিন কোসাচভ নির্বাচন প্রক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে কটাক্ষ করেছেন আমেরিকাকে। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘‘জয়ী পক্ষের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তোলার যথেষ্ট কারণ রয়েছে পরাজিত পক্ষের। এটা স্পষ্ট যে, আমেরিকার গণতন্ত্র দু’পায়েই খোঁড়াচ্ছে।’’ কটাক্ষ ভেনেজুয়েলারও। সে দেশের সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘নিজেদের আগ্রাসন নীতি দিয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমেরিকা যা করেছে, সেটাই এখন তাদের ভোগাচ্ছে।’’

কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। টুইটারে এক ভিডিয়োয় তিনি বলেছেন, ‘‘বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন গণতন্ত্রে এক জন বিদায়ী প্রেসিডেন্টের সমর্থকেরা যখন বৈধ নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে মারমুখী হয়ে ওঠেন, তখন বলতে হয়, ‘এক ব্যক্তি, এক ভোট’-এর চিরাচরিত ধারণাটাই খর্ব হচ্ছে। ওয়াশিংটনে যা হয়েছে, তাকে ‘আমেরিকান’ বলা চলে না। আমরা গণতন্ত্রের শক্তিতে বিশ্বাস রাখি।’’

একই কথা বলেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেজ়। তাঁর মতে, কঠিন সময় পেরিয়ে দেশকে একজোট করতে পারবেন নয়া প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লফভেন বলেছেন, এই ঘটনা গণতন্ত্রের উপরে আঘাত। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর টুইট, ‘‘মানুষের ইচ্ছেকে দমিয়ে দিতে পারবে না হিংসা।’’ একই ভাবে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন মনে করেন, ভিড় কখনও গণতন্ত্রকে খারিজ করতে পারে না। হামলার নিন্দা করে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এবং জাপানের চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি কাতসুনোবু কাতো। হিংসার নিন্দা করেছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবের্তো ফার্নান্দেজ এবং চিলের প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা।

রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস জানিয়েছেন, তিনি ব্যথিত। তাঁর বার্তা, সমর্থকদের গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে ভরসা রাখতে বলুন রাষ্ট্রনেতারা। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়ান অবশ্য সরাসরি বলে দিয়েছেন, আমেরিকার ভোটে জয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাটরাই। তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে তিনি আগ্রহী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement