সংক্রমণ লাগামছাড়া রাশিয়ায় ছবি রয়টার্স।
আচমকাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে উঠেছে কিছু ছবি। মুদি-আনাজের দোকানে দারুণ ভিড়। ওষুধপত্তর-সহ যাবতীয় জরুরী সামগ্রী কেনার হিড়িক পড়ে গিয়েছে দেশজুড়ে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু দোকানে নানা জিনিস বাড়ন্ত। দেশটা যেন কিসের তাড়াহুড়োয়!
দেশটা চিন। কেন এ ভাবে দরকারি জিনিসপত্র বাড়িতে মজুত করছেন বাসিন্দারা, তা অবশ্য জানা যায়নি। অনেকে বলছেন, সামনে শীত, তার জন্য হতে পারে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এমনিতেই জানিয়েছেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি শীত পড়বে এ দেশে। আবার এমনও শোনা যাচ্ছে, সংক্রমণ বাড়ছে চিনে। তাই নতুন করে লকডাউন শুরু হবে।
পৃথিবী জুড়ে সমস্ত বিজ্ঞানীই বলছেন, করোনাভাইরাসকে কোনও ভাবেই নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। ভাইরাসটি থেকে যাওয়ার জন্যই এসেছে। অতিমারি ক্রমশ এনডেমিকে পরিণত হবে। অর্থাৎ পরিচিত রোগ হিসেবে থেকে যাবে। এ অবস্থায় গোটা বিশ্বই করোনার সঙ্গে বাস করা শিখছে। কিন্তু চিন ‘জ়িরো-টলারেন্স’ নীতিতে বিশ্বাসী। তারা দেশকে কোভিড-মুক্ত করতে তৎপর। এ দিকে করোনার ডেল্টা স্ট্রেন সংক্রমণের খবর মিলেছে বেশ কিছু এলাকায়। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ প্রদেশেই স্থানীয় সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই অংশগুলোতে লকডাউন জারি করেছে চিন। এ ছাড়াও প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। পর্যটনে (দেশের মধ্যেও) কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। নতুন করে লকডাউনে স্বাভাবিক ভাবেই ফের ধাক্কা খাবে চিনের অর্থনীতি। কী ভাবে তারা তা সামলাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। কিন্তু এ-ও স্পষ্ট, চিন তাদের সিদ্ধান্তে অপ্রতিরোধ্য।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ চেন ঝেংমিং বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলছে, চিন আরও একটা বছর বন্দিদশায় কাটাবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘চিনের টিকাকরণ হার দারুণ। কিন্তু বুস্টার ডোজ় দেওয়ার মতো টিকা এখন ওদের কাছে মজুত নেই। টিকার ভান্ডার না বাড়ানোর আগে মনে হয় না চিন দেশের মানুষকে মুক্ত করবে। তা ছাড়া ওরা ‘কোভিড-শূন্য’ নীতি থেকেও সরবে বলে মনে হয় না। এ অবস্থায় সরকারের ভয়, নিয়ম লঘু করলেই সংক্রমণ বাড়বে।’’
ইউরোপে ইতিমধ্যেই সংক্রমণ ব্যাপক ভাবে বেড়েছে। জার্মানি থেকে রোমানিয়া, সব দেশেই সংক্রমণ বৃদ্ধির লক্ষণ স্পষ্ট। রাশিয়ায় অক্টোবর মাসে করোনায় ৪৪ হাজার মৃত্যু হয়েছে। দৈনিক মৃত্যু ১ হাজারেরও বেশি ছিল। এ অবস্থায় নভেম্বরের শুরুতেই এক সপ্তাহ ব্যাপী সবেতন অফিস ছুটি ঘোষণা করেছিল রুশ সরকার। সেই ছুটি শেষ হল সোমবার। যদিও মৃত্যুহার একই রয়েছে। এখনও দিনে গড়ে হাজার জনের মৃত্যু হচ্ছে করোনায়। তবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে এই সবেতন ছুটি বাড়ানোর ক্ষমতা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু মাত্র পাঁচটি অঞ্চলেই সেই কাজ হয়েছে।