ইজ়রায়েল-বিরোধী মিছিলে হামাসের সদস্যরা। শনিবার গাজ়ায়। রয়টার্স
উপসর্গ দেখে সন্দেহ হলে পরীক্ষা করার উপায় নেই। কোভিড হলে চিকিৎসার বন্দোবস্ত নেই। ওষুধ নেই, অক্সিজেন নেই। হাজারো ‘নেই’-এর মাঝে অতিমারি-যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত
দেশ সিরিয়া।
রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর চিন্তা, যে ভাবে মিউটেশন ঘটাচ্ছে করোনাভাইরাস, তাতে কোনও বড় ঢেউ আছড়ে পড়লে বিনা চিকিৎসায় মরবেন বাসিন্দারা।
পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে কোভিডে মৃত্যুর তালিকায় অনেকটাই পিছনে সিরিয়া। পশ্চিম এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় কম ক্ষতিগ্রস্ত। তবে অনেকেরই বক্তব্য, যে সংখ্যা ঘোষণা করা হচ্ছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। আসল সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। গত ১০ বছরের গৃহযুদ্ধে গোটা দেশটা কার্যত ধ্বংসস্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রে ডুবে। চিকিৎসার কোনও পরিকাঠামো নেই। এই অবস্থায় দেশের করোনা-পরিস্থিতির স্পষ্ট ছবি জানতে পারাই অসম্ভব স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষে।
সিরিয়ার উত্তর-পূর্বে, কুর্দ বাহিনী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে একটি মাত্র ল্যাবরেটরিটি রয়েছে। তাতেও টেস্ট কিট ফুরনোর মুখে। এ দিকে সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। শুধু এপ্রিল মাসে ৫৩০০ জনের কোভিড ধরা পড়েছে। ‘ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি’ (আইআরসি) জানিয়েছে, ২০২০ সালে মোট যে সংখ্যক সংক্রমণ ধরা পড়েছিল, এ বছর তার অর্ধেকেরও বেশি প্রথম চার মাসেই। উপসর্গ দেখে টেস্ট করলে ৪৭ শতাংশই পজ়িটিভ ধরা পড়ছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বেশ কিছু চিকিৎসা কেন্দ্র খুলেছে সিরিয়ায়। কিন্তু এর মধ্যে সাতটি কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হয়েছে অর্থাভাবে। আইআরসি-র নীতি সংক্রান্ত আঞ্চলিক অধিকর্তা মিস্টি বাসওয়েল বলেন, ‘‘ভেন্টিলেটরে যাওয়া ৮৩ শতাংশ রোগী আর বেঁচে ফিরছেন না। ভয় লাগছে, পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হতে পারে। পরিস্থিতি সামলানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে
স্বাস্থ্য দফতর।’’
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবিকতা সংক্রান্ত বিভাগের প্রধান মার্ক লোকক জানিয়েছেন, দামাস্কাসে একটি আইসিইউ-ও ফাঁকা নেই। এ দিকে, ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে সংক্রমণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। গত মাসে সিরিয়ার আইএস জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকায় রাষ্ট্রপুঞ্জের কোভ্যাক্স প্রকল্প মারফত প্রথম দফায় ভ্যাকসিনের ৫৩ হাজার ৮০০ ডোজ় এসে পৌঁছেছে। অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে সিরিয়াকে। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ খুবই কম। ইদলিব ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাতেই শুধু ৩০ লক্ষ মানুষের বাস। এঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা দারিদ্রসীমার নীচে। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় বা অন্যান্য করোনা-বিধি মেনে চলা প্রায় অসম্ভব। এর মধ্যে অতিমারিতে রাশ টানতে হলে একমাত্র উপায় টিকাকরণ। কিন্তু তা-ও নেই। এর মধ্যে চিন্তা, টিকা এসে পৌঁছলেই তো হবে না, তা প্রয়োগও করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। আফ্রিকা থেকে যেমন প্রতিষেধক নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর মিলছে লাগাতার। পরিকাঠামোর অভাবে টিকা পেয়েও টিকাকরণ করা যাচ্ছে না। ফলে টিকার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় নষ্ট করে দিতে
হচ্ছে প্রতিষেধক।