—প্রতীকী চিত্র।
দিন কুড়ি আগে ই-মেলটা পেয়েই মনস্থির করে নিয়েছিলাম। তিন দিন আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করি। কাল নিয়েও এলাম— ফাইজ়ারের তৈরি করোনা-ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ়। প্রাথমিক কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা, ওরা মিনিট পনেরো দেখল। তার পরেই ছুটি। আজ অনেকটাই নিশ্চিন্ত ভাবে হাসপাতালে যাচ্ছি। আগামী কাল আমার স্ত্রীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট। ৩-৪ সপ্তাহ পরে ডাক এলেই দু’জনেই গিয়ে দ্বিতীয় ডোজ়টা নিয়ে আসব।
জানি, দেশের ৪০ শতাংশ নাগরিক এখনও ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যাপারে দ্বিধায় রয়েছেন। কিন্তু এ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই যে। ফাইজ়ারের এই টিকা তো ৯৫ শতাংশ কার্যকর, আর কী চাই! মডার্নার টিকাও আসছে শীঘ্রই। ফাইজ়ার না-হোক, মডার্না কিন্তু জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের টিকাপ্রাপকদের থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা প্রায় নেই। নিজেকে, নিজের পরিবার আর গোষ্ঠীকে করোনার করাল গ্রাস থেকে বাঁচাতে বিজ্ঞানের উপরেই ভরসা রাখতে হবে আমাদের।
দেশের ব্যাঙ্কাররা এখনও দীর্ঘ লাইনের পিছনে। সে দিক থেকে আমরা ডাক্তার-স্বাস্থকর্মীরা ভাগ্যবান। অনেকটা দায়িত্বও বেড়ে গেল আমাদের। দায়িত্বটা মানুষকে বোঝানোর, ব্যাপক জনসচেতনতা প্রচার। আসলে, ভ্যাকসিন নিয়ে গুজব-ভয়-স্থায়ী বিপদের আশঙ্কা নতুন কিছু নয়। পোলিয়ো-প্রতিষেধক নিয়েও সর্বত্র এটাই হয়েছিস। আর সে জন্য এলভিস প্রিসলেকেও ক্যামেরার সামনে ভ্যাকসিন নিতে হয়েছিল। সেটা ছিল ১৯৫৬-র ঘটনা। আজও পরিস্থিতির খুব বেশি বদল হয়েছে কি!
তবে আমেরিকায় ভ্যাকসিনের জোগান ৫০টি প্রদেশে এখনও যথেষ্ট নয়। সব চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের পেতেই আরও এক-দু’সপ্তাহ লেগে যাবে। আমেরিকার সবার পেতে-পেতে অন্তত এপ্রিল-মে হয়ে যাবে।
নিউ মেক্সিকোর অ্যালবুকার্কি শহরের যে হাসপাতালে আমি কাজ করি, দিন কুড়ি আগে সেখান থেকে একটা ইমেল পেয়েছিলাম। বলা হয়েছিল, টিকা নিতে ইচ্ছুকদের সত্বর অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে। শুধু এই শহরেই ২০টি ভ্যাকসিনেশন পড তৈরি হয়েছে। এক-একটা সেন্টারে প্রথম দিন ১০০ জন করে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
খবরে দেখছি, রাশিয়া দাবি করেছে ওদের স্পুটনিক-ভি দু’বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। যেখানে ফাইজ়ার টিকার আয়ু নাকি বড় জোর ছ’মাস! আমার তো মনে হয়, মস্কোর এমন দাবি অমূলক। ইউরোপ কিংবা আমেরিকার অনুমোদিত ভ্যাকসিন অনেক বেশি নিরাপদ এবং কার্যকর। এখন এই বিশ্বাসটাই ছড়িয়ে দিতে হবে।