প্রতীকী ছবি।
এপ্রিল মাসের গোড়ায় ভারতে তখন প্রবল বেগে আছড়ে পড়েছে অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ। ডেল্টা স্ট্রেনের বাড়বাড়ন্তে রোজ সংক্রমিত হচ্ছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। মৃত্যুর পরিসংখ্যান ভয় ধরাচ্ছে তামাম দুনিয়ায়। বিপদ বুঝে সেই সময়ে ভারতকে লাল তালিকাভুক্ত করেছিল ব্রিটেন। অর্থাৎ ভারত থেকে কেউ ব্রিটেনে পৌঁছলে তাঁকে বাধ্যতামূলক ১০ দিন হোটেলে কোয়রান্টিন থাকতে হবে। প্রায় মাস চারেক পরে সেই লাল তালিকা থেকে সরল ভারত।
আপাতত হলুদ তালিকায় ঠাঁই হয়েছে ভারতের। এ বার ভারত থেকে কেউ ব্রিটেনে পৌঁছলে তাঁকে আর বাধ্যতামূলক ভাবে হোটেলে থাকতে হবে না। তার বদলে বাড়িতে ১০ দিন কোয়রান্টিন থাকলেই চলবে। তবে বিমানে চড়ার সময়ে আগের মতোই আরটিপিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট সঙ্গে রাখতে হবে। পাশাপাশি ব্রিটেনে পৌঁছে কোয়রান্টিনের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে পরপর আরটিপিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে। আগামী রবিবার স্থানীয় সময় ভোর চারটে থেকে এই নিয়ম চালু হবে। নতুন নিয়ম চালু হলে ভারত থেকে ব্রিটেনে ফের পর্যটকদের ঢল নামবে বলে আশা করছে শিল্পমহল। বিমানেও যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
কোন দেশ থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা কতটা, তার উপরে ভিত্তি করে তিনটি তালিকা তৈরি করেছে ব্রিটেন। ট্র্যাফিক সিগন্যালের মতোই বার্তাবহ সেই লাল-হলুদ-সবুজ রঙের তালিকাগুলি। এ দিন সবচেয়ে বিপজ্জনক অর্থাৎ লাল তালিকা থেকে ভারতের পাশাপাশি সরেছে বাহরাইন, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। এই দেশগুলিকে হলুদ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। হলুদ থেকে সবুজ তালিকায় ঢুকেছে অস্ট্রিয়া, জার্মানি, স্লোভেনিয়া, স্লোভাকিয়া, লাটভিয়া, রোমানিয়া এবং নরওয়ে। ফলে সবুজ তালিকায় থাকা দেশের সংখ্যা ২৯ থেকে বেড়ে ৩৬ হয়েছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ায় মেক্সিকো-সহ মোট চারটি দেশকে লাল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
ব্রিটেনে ৯০ শতাংশের বেশি প্রাপ্তবয়স্কের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। সদ্য চালু হয়েছে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের মধ্যে টিকাকরণ। তবু সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১,৬৯১ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত ১১৯ জন। এই পরিস্থিতিতে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান জানিয়েছেন, গণপরিবহণে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে সংশ্লিষ্ট দফতরের (ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন) সঙ্গে কথা চলছে। গত ১৯ জুলাই থেকে মাস্ক পরা-সহ নানা বিধি নিষেধ থেকে ব্রিটেনবাসীকে মুক্তি দিয়েছিল বরিস জনসনের সরকার। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গণপরিবহণে মাস্ক বিধি ফিরিয়ে আনতে চান মেয়র। তিনি জানিয়েছেন, নতুন নিয়মে মাস্ক না-পরলে তা জরিমানাযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হবে।
এ দিকে, শীতের মুখে আমেরিকায় সংক্রমণ বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন সে দেশের শীর্ষ সংক্রমণ-বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউচি। তিনি বলেছেন, ‘‘বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতি আয়ত্তে না এলে শীতের মুখে আমেরিকায় সংক্রমণ দ্বিগুণ হারে বাড়বে।’’ পাশাপাশি ডেল্টার থেকেও ভয়ঙ্কর কোনও স্ট্রেন আসতে পারে বলে আশঙ্কা জানান তিনি।
অন্য দিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বার্তা দেওয়া সত্ত্বেও জার্মানি, ইজ়রায়েলের পরে এ বার করোনা টিকার বুস্টার ডোজ় দেওয়ার কথা ঘোষণা করল ফ্রান্স। সম্প্রতি হু প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস আবেদন জানান, ধনী ও দরিদ্র দেশগুলির মধ্যে টিকাদানের ব্যবধান বাড়ছে। তা কমিয়ে আনতে অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অতিরিক্ত বুস্টার ডোজ় প্রয়োগ যেন বন্ধ রাখা হয়। সেই আবেদন উড়িয়ে ফ্রান্স ও জার্মানি জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকেই প্রবীণ এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি এমন নাগরিকদের বুস্টার ডোজ় দেওয়া শুরু হবে।