Fall of Government under Pressure

রাষ্ট্রপ্রধানকে টেনেহিঁচড়ে হত্যা, বাসভবনে লুটপাট! এই শতকে গণবিদ্রোহে উৎখাত যে সব সরকার

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ পালিয়ে গিয়েছেন। রাজধানী দামাস্কাস দখল করে নিয়েছেন বিদ্রোহীরা। গত অগস্টে চাপের মুখে দেশ ছাড়তে হয়েছে বাংলাদেশের শেখ হাসিনাকেও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:০১
Share:

গণবিদ্রোহের ফলে একাধিক দেশের সরকারের পতন হয়েছে সাম্প্রতিক অতীতে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

বিদ্রোহীদের চাপে রাজধানী ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। দামাস্কাস দখল করে নিয়েছেন বিদ্রোহীরা। আসাদ কোথায়, কেউ জানেন না। তবে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তাঁকে রবিবার সকালে দামাস্কাসের বিমানবন্দর থেকে বিমানে উঠতে দেখা গিয়েছে। সিরিয়া অবশ্য প্রথম নয়। গত কয়েক বছরে একাধিক দেশে বিদ্রোহীদের চাপের মুখে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে ক্ষমতাসীন সরকার। সাম্প্রতিকতম উদাহরণ তো বাংলাদেশই। দেশ জুড়ে বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন শেখ হাসিনা। এখন বাংলাদেশের শাসন মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে।

Advertisement

সরকার পতনের ইতিহাস বরাবরই রক্তাক্ত। কোথাও বিদ্রোহের আঁচ পেয়ে রাষ্ট্রপ্রধান পালিয়ে গিয়েছেন। কোথাও আবার পালানোর সুযোগ পাননি। বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে শাসককে। সরকার পতনের এই তালিকায় রয়েছে আফ্রিকার লিবিয়া থেকে শুরু করে ভারতের পড়শি শ্রীলঙ্কাও।

বাংলাদেশ

Advertisement

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে অশান্তির সূত্রপাত ঘটেছিল। সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থায় আং‌শিক সংস্কার চেয়ে পথে নেমেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। ক্রমশ তা হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবির আন্দোলনে পরিণত হয়। গত ৫ অগস্ট দেশ জুড়ে বিক্ষোভের মাঝে পদত্যাগ করেন হাসিনা। ‘গণভবন’ ছেড়ে কপ্টারে ভারতে চলে আসেন তিনি।

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের ছোড়া রবার বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছেন আন্দোলনকারী ছাত্র আবু সইদ। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। ছবি: সংগৃহীত।

কয়েকটি সূত্রে দাবি, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী হাসিনাকে পদত্যাগের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিল। চাইলেও বিদায়ী ভাষণ রেকর্ড করে আসতে পারেননি হাসিনা। তিনি চলে আসার পর গণভবনে ঢুকে পড়েন শয়ে শয়ে বিদ্রোহী। হাসিনার শোয়ার ঘরেও ঢুকে পড়েন তাঁরা। চলে দেদার লুটপাট। এমনকি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পরনের পোশাক হাতে নিজস্বী তুলতেও দেখা যায় অনেককে। বাংলাদেশে সে দিনই হাসিনার বাবা তথা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভেঙে ফেলেন বিদ্রোহীরা।

লিবিয়া

লিবিয়ায় মুয়াম্মর গদ্দাফির সরকার পতনের আগে সশস্ত্র বাহিনী। —ফাইল চিত্র।

চার দশকের বেশি সময় ধরে আফ্রিকার লিবিয়ায় ক্ষমতাসীন ছিলেন একনায়ক মুয়াম্মর গদ্দাফি। ২০১১ সালে গণঅভ্যুত্থানের জেরে তাঁর পতন ঘটে। রাজধানী ত্রিপোলি দখল করে নেন বিদ্রোহীরা। ত্রিপোলি দখলের পর বেশ কিছু দিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন গদ্দাফি। পরে বিদ্রোহীদের হাতেই তিনি ধরা পড়ে যান। প্রকাশ্য রাস্তা দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। মারধর করা হয়। মোবাইলে রেকর্ড করা হয় সে সব দৃশ্য।

লিবিয়ার একনায়ক মুয়াম্মর গদ্দাফি। —ফাইল চিত্র।

একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, গদ্দাফিকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে তাঁর পিছনে লাঠি বা ধারালো দণ্ড দিয়ে খোঁচা দেওয়া হচ্ছে। (সেই ভিডিয়োর সত্যতা অবশ্য যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।) বলা হয়, এর পর গদ্দাফিকে ট্রাকের সামনে ফেলে চাপা দিয়ে মারা হয়েছিল। তাঁর পুত্রকেও বন্দি করা হয়। পরে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয় লিবিয়ার আদালত।

শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ। —ফাইল চিত্র।

ভারতের দক্ষিণের পড়শি দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাও গণবিদ্রোহে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বছর দুয়েক আগে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের এবং তাঁর ভাই তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের শাসনকালে তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সাধারণ মানুষ তাঁদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন।

শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। —ফাইল চিত্র।

প্রবল গণবিক্ষোভে দেশ যখন জ্বলছে, তখনই কলম্বোয় সরকারি বাসভবন ছেড়ে সেনাবাহিনীর বিশেষ বিমানে চেপে গোপনে দেশ ছাড়েন গোতাবায়া। সস্ত্রীক পৌঁছে যান আর এক দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুরেও গিয়েছিলেন। ইমেলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে। গোতাবায়া আত্মগোপন করার পরেই তাঁর প্রাসাদের দখল নিয়েছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। প্রেসিডেন্টের সাত মহলা প্রাসাদের বিলাসবহুল ঘরে ঢুকে কাউকে দিবানিদ্রা দিতে দেখা যায়, কেউ আবার নরম বালিশ নিয়ে ছোড়াছুড়ি করেন। প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সুইমিং পুলেও গা ভাসিয়েছিলেন উত্তেজিত মানুষ।

আফগানিস্তান

ভারতের আর এক পড়শি দেশ আফগানিস্তানেও সাম্প্রতিক অতীতে সরকারের পতন ঘটেছে। তবে তা অবশ্য গণবিক্ষোভের ফলে নয়। জঙ্গিগোষ্ঠী তালিবান ওই দেশের দখল নিয়েছে। ২০২১ সালের ১৫ অগস্ট কাবুল দখল করে নেয় তালিবান। তার কিছু দিনের মধ্যে তারা সরকার ঘোষণা করে। প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি পালিয়ে যান কাবুল ছেড়ে। তালিবানের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই আফগানিস্তান ছেড়ে গিয়েছিল আমেরিকার সেনা। সেই থেকে তালিবান রয়েছে আফগানিস্তানের কুর্সিতে। ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা একাধিক ফতোয়া জারি করেছে আফগানিস্তানে। হস্তক্ষেপ করা হয়েছে নারীস্বাধীনতায়। তালিবানি শাসনের অধীনে আফগানিস্তানে অর্থসঙ্কটও চরমে উঠেছে।

আফগানিস্তানে তালিবান রাজ। —ফাইল চিত্র।

সুদান

গৃহযুদ্ধে দীর্ণ আফ্রিকার সুদানেও সম্প্রতি রাজনৈতিক ক্ষমতায় হস্তান্তর হয়েছে। স্বৈরতন্ত্রী শাসক ওমর আল বশির ৩০ বছর ক্ষমতাসীন থেকে শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের জেরে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন। কিন্তু তার পরেও সুদানে গৃহযুদ্ধ থামেনি। এই যুদ্ধে প্রধান প্রতিপক্ষ সে দেশের সশস্ত্র বাহিনীরই দুই জেনারেল— সেনাপ্রধান আবদেল আল ফতা আল বুরহান ও জেনারেল মহম্মদ হামদান দাগালো। ২০২১-এর অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লা হামদকের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকেও উৎখাত করেন সেনাপ্রধান বুরহান।

গৃহযুদ্ধে উত্তাল সুদান। —ফাইল চিত্র।

তিউনিশিয়া

আফ্রিকার তিউনিশিয়ায় গণবিক্ষোভের ফলে পতন হয় একনায়ক বেন আলির সরকারের। ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত তিউনিশিয়ায় ক্ষমতাসীন ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে তাঁর বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ চরম আকার নেয়। চাপের মুখে সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর পতনের পর তিউনিশিয়ায় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

২০১১ সালে তিউনিশিয়ায় গণবিক্ষোভ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement