ব্রাজিলে সারি সারি খুঁড়ে রাখা কবর। পাশেই কোভিড বিধি মেনে সমাধিস্থ করা হচ্ছে এক রোগীকে। ছবি: রয়টার্স।
অতিমারির কবলে পার হয়ে গিয়েছে এক বছরেরও বেশি সময়। এসে গিয়েছে মারণ ভাইরাস প্রতিরোধী প্রতিষেধক। তার পরেও নোভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় টালমাটাল অবস্থা বিশ্বের। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে গোটা বিশ্বে করোনার বলি হওয়া মানুষের সংখ্যা ৩০ লক্ষের কোটা ছাড়িয়ে গেল। আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শনিবার পর্যন্ত গোটা বিশ্বে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ৩০ লক্ষ ১ হাজার ৮৮৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
তবে অতিমারি সঙ্গে নিয়ে এক বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও, গত কয়েক মাসে হু হু করে মৃত্যুসংখ্যা বেড়ে চলেছে বলে জানিয়েছে ওই তথ্য। তারা বলেছে, ২০২০-র ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গোটা বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ১০ লক্ষের আশপাশে ছিল। এ বছর ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র পাঁচ মাসে সেই সংখ্যা বেড়ে ২০ লক্ষ হয়। তার পর দু’মাস কাটেনি। তার মধ্যে ৩০ লক্ষের কোটা পেরিয়ে গেল মৃত্যুসংখ্যা।
মৃত্যুর নিরিখে এই মুহূর্তে একেবারে শীর্ষে আমেরিকা। সেখানে করোনার প্রকোপে প্রাণ গিয়েছে ৫ লক্ষ ৬৬ হাজার ২২৪ জন মানুষের। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে কোভিডে মৃত রোগীর সংখ্যা ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার ৭৪৯। ২ লক্ষ ১১ হাজার ৬৯৩ জন করোনা রোগীর মৃত্যুতে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে মেক্সিকো। এই তালিকায় ভারত রয়েছে চতুর্থ স্থানে। এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৪৯ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে ভারতে। পঞ্চম স্থানে থাকা ব্রিটেনে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৪৭২।
২০১৯-এর শেষ দিকে চিন থেকে যখন গোটা বিশ্বে করোনা থাবা বসাতে শুরু করে, তখন কিন্তু পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হতে পারে বলে আঁচ করতে পারেননি বিশ্বের তাবড় বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশও যে অতিমারির কবলে পড়বে, তা-ও আঁচ করা যায়নি। তবে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলি যেখানে ভয়াবহতা কাটিয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, সেখানে উৎকৃষ্ট মানের চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ ওই দেশগুলি।
মোট সংক্রমণের নিরিখে এই মুহূর্তে আমেরিকাই শীর্ষে। সেখানে এখনও পর্যন্ত ৩ কোটি ১৫ লক্ষ ৭৩ হাজার ৯৫৪ জন নাগরিক কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে বলে দাবি সে দেশের বিশেষজ্ঞদের। তবে জো বাইডেনের সরকার গঠিত হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত তেমন উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি।
অন্য দিকে, বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় মৃত্যুর হার অনেকটা কম হলেও, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ভারতে প্রতিদিন সংক্রমণ উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। শনিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ২ লক্ষ ২৪ হাজার মানুষ। দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে এই মুহূর্তে ভারতই সবার থেকে এগিয়ে। মূলত প্রতিষেধকের ঘাটতি এবং তার জেরে টিকাকরণের গতি শিথিল হয়ে যাওয়াকেই এর জন্য দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তার মধ্যে চিন্তা বাড়িয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকা ‘ল্যানসেট’। ভাসমান জলকণা বা ড্রপলেটস-এর মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে বলে এত দিন জানা থাকলেও, সেই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে তারা। নতুন রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছে, কোভিড-১৯ ভাইরাসের জন্য দায়ী সার্স-কোভ-২ ভাইরাস বায়ুবাহিতও।