প্রতীকী ছবি।
ব্রিটেনের পর আমেরিকাতেও টিকাকরণ শুরু হয়ে গেল। কানাডাও ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে ফাইজ়ার-বায়োএনটেক কোভিড ভ্যাকসিনটিকে। ইউরোপের দেশগুলিতেও তোড়জোড় চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোভিড নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সবুজ সঙ্কেত
দিলেই সেখানেও টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। এ অবস্থায় গরিব ও উন্নয়নশীল দেশগুলিকে নিয়ে চিন্তায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। গরিব দেশগুলিতে কী ভাবে দ্রুত এবং স্বস্তায় টিকা পাওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে কাল ভ্যাকসিন-প্রস্তুতকারী সংস্থা ফাইজ়ার ও মডার্নার সঙ্গে বৈঠক করল তারা।
বিশ্বে টিকার সমবণ্টনের জন্য ‘কোভ্যাক্স’ নামে একটি উদ্যোগ নিয়েছে হু। তাতে অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা, নোভাভ্যাক্স, সানোফি-জিএসকে-সহ বেশ কিছু সংস্থা যুক্ত হয়েছে। কিন্তু এদের তৈরি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনগুলি এখনও যথেষ্ট সাফল্য পায়নি। এ অবস্থায় হু-র শীর্ষস্থানীয় উপদেষ্টা ব্রুস এলওয়ার্ড জানিয়েছেন, তাঁরা অন্য টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থার দিকে তাকিয়ে। এ-ও জানিয়েছেন, ফাইজ়ার ও মডার্নার সঙ্গে আলোচনা চলছে, যদি তারাও হু-র উদ্যোগে শামিল হয়। তবে ব্রুসের বক্তব্য, ‘‘সংস্থা দু’টিকে টিকার দাম কম রাখার উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। যাতে যে সব দেশকে সাহায্য করা প্রয়োজন, তারা সকলে টিকা পায়।’’
মার্কিন সংস্থা ফাইজ়ার ও জার্মান সংস্থা বায়োএনটেকের তৈরি কোভিড টিকা সর্বপ্রথম কোনও দেশে ছাড়পত্র পেয়েছে। মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিনও শীঘ্রই ছাড়পত্র পাবে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু দু’টি টিকাই অতি আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি, সংরক্ষণ প্রক্রিয়াও খরচসাপেক্ষ এবং বেশ দামি। এ অবস্থায় গরিব দেশগুলোর বাসিন্দাদের জন্য কিছুটা দাম কমানোর আর্জি জানিয়েছেন ব্রুস এলওয়ার্ড।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপুঞ্জে আশ্বাস ভারতের, টিকা শুরু কানাডায়
‘দ্য বিএমজে’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সমীক্ষা রিপোর্টে ধরা পড়েছে, ২০২২ সালের শেষে পৌঁছেও বিশ্বের জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগের কাছে ভ্যাকসিন অধরা থেকে যাবে। ওই জার্নালেই প্রকাশিত অন্য একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, বিশ্বের ৩৭০ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক কোভিড ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী। টিকার চাহিদা কতটা ও তার সমবণ্টন কতটা প্রয়োজনীয়, সেটা বোঝাতেই এই সমীক্ষাটি করা হয়েছে। এই দু’টি রিপোর্ট একসঙ্গে তুলে ধরে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, গোটা প্রক্রিয়ায় কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কতটা কঠিন, তা অনুধাবন করা উচিত সংস্থা ও রাষ্ট্রগুলির।
আরও পড়ুন: আবার বিধিনিষেধ ইংল্যান্ডে
যেমন ‘জন্স হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেল্থ’-এর বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা: ‘‘ভ্যাকসিন বাজারে আসার আগেই ধনী দেশগুলি ভবিষ্যতে উৎপাদিত টিকার অর্ধেকের বেশি আগাম কিনে রেখেছে। বাকি বিশ্বের কী হবে জানা নেই। রাষ্ট্রগুলোর এবং টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোর উচিত টিকার সমবণ্টনের যথেষ্ট আশ্বাস দেওয়া এবং গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা।’’
ব্রিটেন ও আমেরিকায় জোরকদমে চলছে টিকা দেওয়ার কাজ। এর মধ্যে বুধবার থেকে কঠিনতম কড়াকড়ি জারি হয়েছে ব্রিটেনে। এক দিকে টিকাকরণ ও অন্য দিকে সংক্রমণ হার কমানোর লক্ষ্যস্থির করেছে বরিস জনসন সরকার। যাতে বড়দিনের আগে বড়সড় বিপদ না-হয়। থিয়েটার, পাব, রেস্তরাঁয় জমায়েত বন্ধ। শুধু কাফে-রেস্তরাঁ থেকে ‘টেকঅ্যাওয়ে ফুড’ খোলা রাখা হয়েছে। ছ’জনের বেশি এক জায়গায় জড়ো হওয়া নিষেধ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, ‘‘এ সব করা খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। মানুষকে নিরাপদে রাখতে হবে। তা ছাড়া আগাম সতর্কতা যে কাজে দেয়, আগে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।’’
আমেরিকাতেও বারবার করে সরকারের পক্ষ থেকে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে, টিকাকরণ শুরু হলেও মাস্ক পরা ও দূরত্ববিধি মানতেই হবে। না-হলে বড়দিনের আগে সমুহ বিপদ।