লকডাউনের প্রথম দিন। —ছবি রয়টার্স।
শুরু হল ব্রিটেন জুড়ে লকডাউন। আজ প্রথম দিন। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়ে দিয়েছেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোলে জরিমানা করতে পারে পুলিশ। মুদির দোকান, সুপার মার্কেট, পোস্ট অফিস, ওষুধের দোকান আর মণিহারি দোকান ছাড়া সব বন্ধ। প্রকাশ্যে একসঙ্গে দু'জনের বেশি মানুষের জড়ো হওয়া বন্ধ।
হ্যাঁ, করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রুখতে সব বন্ধ। কিন্তু বন্ধ নয় খবরের কাগজ।
লকডাউনই হোক বা সামাজিক ভাবে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা-- রোজ সকালে দরজায় (লন্ডনে, চিঠির বাক্সে) খবরের কাগজের আছড়ে পড়ার শব্দটার জন্য কিন্তু অপেক্ষা করে থাকে মানুষ। টিভির খবর আছে ঠিকই, কিন্তু সকালের চায়ের সঙ্গে খবরের কাগজ যেন একটা বাড়তি ভরসা। আর প্রবীণদের কাছে খবরের কাগজ যে 'লাইফলাইন', তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। খবর পড়ার পরে এঁরা অনেকেই শব্দছকের পাতাটা খুলে জমিয়ে বসেন। কেউ মন দেন সুদোকু-তে।
করোনার সময়ে খবরের কাগজ থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে একটা তত্ত্ব রটেছে। সেটা বিশেষজ্ঞেরা উড়িয়েও দিয়েছেন। জানিয়ে রাখি, ব্রিটেনে লকডাউন সত্ত্বেও সব খবরের কাগজ শুধু যে ছাপা হচ্ছে তা-ই নয়, নিয়মিত বাড়িতে পৌঁছেও দেওয়া হচ্ছে।
এখানে আপনি কাগজ বাড়িতে নিতে পারেন, অথবা পত্রপত্রিকার স্টলে বা সুপারমার্কেটে গিয়ে কিনতে পারেন। সকালে প্রকাশিত 'মেট্রো', আর দুপুরের 'ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড'-- দু'টো কাগজই পাঠকেরা পান বিনামূল্যে। কাগজ রাখা থাকে টিউব স্টেশনের মতো জায়গায়। অফিসে যাতায়াতের পথে লোকে তুলে নেন ইচ্ছেমতো।
'ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড'-এর সম্পাদক জর্জ অসবোর্ন ছিলেন ডেভিড ক্যামেরনের আমলে দেশের অর্থমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, আজ থেকে বাড়ি-বাড়ি বিনামূল্যে কাগজ পৌঁছে দেবেন তাঁরা। ১৯৩ বছরের পুরনো সান্ধ্য দৈনিকটির ইতিহাসে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। অসবোর্ন বলেন, "এর ফলে যে পাঠকেরা এখন বাড়ি থেকে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁরা কাগজটা ঠিকই পেয়ে যাবেন। আমাদের সংবাদপত্র তো তাঁদের দৈনন্দিন জীবনেরই অঙ্গ।"
আপাতত মধ্য লন্ডনকে ঘিরে প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দেওয়া হচ্ছে এই বিশেষ 'হোম-ডেলিভারি' পরিষেবা। হ্যাম্পস্টেড, ব্রিক্সটন, ইজ়লিংটন, ক্যামডেন, গ্রিনিচ, ফুলহ্যাম-সহ ২৬টি এলাকায় সন্ধের মধ্যেই খবরের কাগজের ভ্যান এসে কাগজ তুলে দেবে তাদের 'ডেলিভারি টিম'-এর হাতে। তারা পৌঁছে দেবে বাড়িতে। সুপারমার্কেট আর 'ব্যস্ত' বলে চিহ্নিত টিউব স্টেশনগুলোতেও পৌঁছে দেওয়া হবে কাগজ। কারণ, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অনেককে তো বেরোতে হবেই। অসবোর্ন বলছেন, পাঠকদের অনলাইনে কাগজ পড়ে নিতে বলবেন না তাঁরা। ছাপা কাগজ হাতে পৌঁছে দিতে তাঁরা দায়বদ্ধ।
ব্রিটেনে করোনা-সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে চললেও জনসন যথেষ্ট কড়া পদক্ষেপ করছিলেন না বলে অভিযোগ উঠছিল। লোকে আগের মতোই ভিড় করছিল পার্কে আর সৈকতে। ইরান-ইটালি থেকে বিমানও আসছিল। অবশেষে গত কাল রাত সাড়ে ৮টায় লকডাউনের ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা বা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য বেরোনো চলবে। জিম বন্ধ, একা যদি কেউ জগিংয়ে বেরোতে চান, সেই অনুমতি মিলবে দিনে মাত্র এক বার।
লন্ডনের কিংস কলেজ একটা নতুন অ্যাপ আনছে, যেখানে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে যে-কেউ জেনে নিতে পারবেন নিজের শরীরে করোনার লক্ষণ আছে কি না, বা ঝুঁকির পরিমাণ কতটা। পাওয়া যাবে যাবতীয় তথ্য। ব্রিটেনের প্রায় ৫০০০ জোড়া যমজ ও তাঁদের পরিবারকে নিয়ে সেটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ এ বার শুরু হবে।
এমন সব পদক্ষেপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আর দেখেনি ব্রিটেন।