ছবি রয়টার্স
অর্থনীতির চাকা সচল করতে গিয়ে লকডাউন তুলে এখনই অফিস-স্কুল-কলেজ খুলে দিলে ফল মারাত্মক হবে বলে সতর্ক করেছিলেন মার্কিন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফসি। সেই বার্তা একেবারেই ‘গ্রহণযোগ্য’ নয় বলে উড়িয়ে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ওঁর প্রস্তাবে বিস্মিত। এটা মোটেই মানা যায় না। বিশেষত স্কুলের ক্ষেত্রে তো নয়-ই।’’
আমেরিকায় ইতিমধ্যেই করোনা-সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৮৫ হাজারের বেশি মানুষের। গোটা বিশ্বে যা সর্বাধিক। এই অবস্থায় মার্কিন সরকারের উপদেষ্টা ফসি-র বক্তব্য ছিল, আগেভাগে লকডাউন তুলে নিলে মৃত্যুমিছিল আরও লম্বা হবে। যা মোটেই ‘গ্রহণযোগ্য’ বলে মনে হয়নি প্রেসিডেন্টের। তাঁর মতে, এখন একটি কাজই করা যায়। তা হল প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আগামী কয়েক সপ্তাহ ক্লাস নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু অল্পবয়স্ক পড়ুয়াদের স্কুল-কলেজে আসতে কোনও সমস্যা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘পরিসংখ্যান দেখুন আপনারা। বাচ্চাদের কিন্তু কোনও ঝুঁকি নেই। এই রোগ বয়স্কদেরই আগে থাবা বসায়।’’
ট্রাম্প ইতিমধ্যেই বিভিন্ন প্রদেশগুলিকে লকডাউন তোলার ব্যাপারে উৎসাহ দিতে শুরু করেছেন। লকডাউন না-তুলতে চেয়েই বরং সমালোচনার মুখে পড়ছেন গভর্নরেরা। আর এই সময়েই করোনা-মোকাবিলায় মার্কিন সরকারের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের শীর্ষে থাকা ফসি বলে বসেছেন, লকডাউন তুললে ‘ভোগান্তি আর মৃত্যুই’ শুধু বাড়বে। আবার এ-ও বলেছেন, ‘‘অল্পবয়স্করা এই রোগের থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।’’ তিনি এমনও জানিয়েছেন, সরকারি পরিসংখ্যানের তুলনায় আমেরিকায় আসল মৃত্যুর সংখ্যা আদতে বেশি। ট্রাম্প অবশ্য সে সবে কান না-দিয়েই বলেছেন, ‘‘আমরা বিধিনিষেধ মেনেই লকডাউন তুলব। কিন্তু আমাদের যত দ্রুত সম্ভব এই কাজ করতে হবে। স্কুলের বিষয়ে আমি ওঁর সঙ্গে একেবারেই একমত নই।’’ ট্রাম্পের বেপরোয়া মনোভাবের সমালোচনা করে তাঁকে ‘উন্মাদ’ বলেছেন হলিউড অভিনেতা রবার্ট ডি’নিরো। এ দিকে, করোনা পরিস্থিতিতে বহু সংস্থা কর্মী ছাঁটাই করায় গত সপ্তাহে আমেরিকায় অন্তত ৩০ লক্ষ কর্মহীন মানুষ বেকারত্বের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
বিশ্বে করোনা
মৃত
৩,০১,৯১৪
আক্রান্ত
৪৪,৯৮,১১২
সুস্থ
১৬,৯১,৬২৫
এ দিকে রাশিয়ার মাত্র ০.৯ শতাংশ মৃত্যুহার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে অন্য দেশগুলো। ভ্লাদিমির পুতিনের দেশে সংক্রমিত আড়াই লক্ষেরও বেশি মানুষ। কিন্তু মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত ২,৩০৫ জনের। ব্রাজিলে রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১,৪০০-র কাছাকাছি মানুষ।
জাপান সরকার আজ জানিয়েছে, যে রকম পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তার আগেই লকডাউন তোলা হতে পারে কিছু প্রদেশে। চিনে নতুন করে ১৫ জনের করোনা-সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাঁদের মধ্যে ৮ জনের কোনও উপসর্গ নেই। তিন জন স্থানীয় ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। উহানে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের আশঙ্কায় এক কোটির বেশি মানুষের করোনা-পরীক্ষা হয়েছিল। স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, নতুন করে শহরে কেউ আক্রান্ত হননি।
পাকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, সে দেশে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৩৬ হাজারের কাছাকাছি। নতুন করে ৩৩ জনের মৃত্যু হওয়ায় করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা আটশো ছুঁইছুঁই। আক্রান্ত হয়েছেন বালুচিস্তানের অর্থমন্ত্রী জ়হুর বুলেদি। আজ বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে দু’জন করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: তিন মিনিটের জুম-কলেই চাকরি গেল সাড়ে ৩ হাজার কর্মীর